‘স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়, কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে।
সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, 'এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান- সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।'
তিনি বলেন, 'একটা কথা আমি বলে দিতে চাই যে, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিলো আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।'
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বার বার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই।'
তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন হয়। একটি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, আর একটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।'
তিনি বলেন, 'তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বার বার।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম- এই সবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন।'
তিনি বলেন, 'এটা সকলের মনে রাখা উচিত যে, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উঠায় না, প্রশ্ন উঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয়- ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে।'
জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শত্রুর বন্দিখানা থেকে এই দেশের মাটিতে ফিরে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তাকে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট হত্যা করা হলেও তার দেওয়া নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী আমরা রাষ্ট্রপরিচালনা করে আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। পিতার কাছে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।'
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত ও অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কোচি। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ সেনাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ফিরে আসেন। সেই থেকে দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করছে জাতি।
Comments