লালমনিরহাট

ফেব্রুয়ারি আসলে শুরু হয় শহীদ মিনার ভাঙা-গড়ার কাজ

ফেব্রুয়ারি আসলে শুরু হয় শহীদ মিনার ভাঙা-গড়ার কাজ
ফেব্রুয়ারি আসলে শুরু হয় শহীদ মিনার ভাঙা-গড়ার কাজ। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট শহরের থানা রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি। এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭২ সালে ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে এই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন। 

এটি জেলার সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল মানুষের মিলনকেন্দ্র। কিন্তু এই শহীদ মিনারটি এখন চরম অবহেলার শিকার। 

ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই শহীদ মিনারটিতে চলে ভাঙা-গড়ার খেলা। এতে নষ্ট হয়ে গেছে শহীদ মিনারটি পূর্বের নকশা ও ঐতিহ্য। তাই চরম ক্ষুব্ধ শহরবাসী। 

সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, লালমনিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ মিনারটি ভেঙে নতুনভাবে সংস্কার করেন। এতে ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। কিন্তু শহীদ মিনারের মূল বেদী সরিয়ে নেওয়া নেওয়া হয়েছে। এতে শহীদ মিনারটি ঐতিহ্য হারিয়েছে। 

লালমনিরহাট শহরের থানা রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি
লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র একটি বিশেষ বাড়ির সৌন্দর্য্য রক্ষার খাতিরে শহীদ মিনারটির মূল বেদী সরিয়ে নেন। 

সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেও কোনো সমাধান পাননি। বর্তমান পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন শহীদ মিনারটির মূল বেদীর কিছু অংশ ভেঙে সংস্কার শুরু করেছেন। শহীদ মিনারটির সীমানা প্রাচীরের কাজও করা হচ্ছে। কিন্তু এব্যাপারে কোনো নকশা এবং বাজেটের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না। শহীদ মিনারটির পুনরায় সংস্কারের নামে কেটে ফেলা হয়েছে কয়েকটি গাছ।

লালমনিরহাট সাংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা পরিচালক সুফী মোহাম্মদ তাহেরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে লালমনিরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটির ঐতিহ্য। শহীদ মিনারটিকে সাবেক নকশায় ফিরিয়ে আনতে আমি ২০২০ সালের ২২ মার্চ মহামান্য হাইকোর্টে একটি আপিল আবেদন করেছি। বর্তমানে আমার আপিলটি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে।'

'সাবেক মেয়র শহীদ মিনারের বেদী স্থানান্তর করেছেন আর বর্তমান মেয়র বেদীর কিছু অংশ ভেঙে সংস্কার করছেন। এখানে শুধু চলছে ভাঙা-গড়ার।'
 
তিনি বলেন, 'একটি বিশেষ বাড়ির সৌন্দর্য্য রক্ষায় শহীদ মিনারের বেদী স্থানান্তর করা হয়েছে এটা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না।'

হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজল রশিদ বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদ মিনারটিকে সাবেক নকশায় ফিরিয়ে এনে সংস্কার করার জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শহীদ মিনারটি আগের নকশায় ফিরিয়ে আনা হলে এটির ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। আমাদের হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।'

লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম স্বপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থান সংকুলান করতে শহীদ মিনারের বেদীর কিছু অংশ ভেঙে সংস্কার করা হচ্ছে। শহীদ মিনারটির সীমানা প্রাচীর না থাকায় এটি অরক্ষিত ছিল। তাই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে কয়েকটি গাছ কাটতে হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর যৌথভাবে ব্যক্তিগত খরচে শহীদ মিনারটির সংস্কার কাজ করছি। শহীদ মিনার সম্পর্কে মহামান্য হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিলে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করা হবে।'

ভাষাসৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদ মিনারে কেন এত ভাঙা-গড়া করতে হবে। এতে শহীদ মিনারের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'

শহীদ মিনারটি আগের নকশায় ফিরিয়ে এনে সংস্কারের দাবি জানান তিনি। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Freedom fighter’s definition: Confusion, debate over ordinance

Liberation War adviser clarifies that Sheikh Mujib, Tajuddin, others in Mujibnagar govt are freedom fighters

13h ago