বাংলাদেশ

রানা প্লাজা: বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ৫৪.৫ শতাংশ এখনো কর্মহীন

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। এতদিনেও বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।
রানা প্লাজা
রানা প্লাজায় ধস। স্টার ফাইল ফটো

২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ এখনো কর্মহীন আছেন। তাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ গত ৫-৮ বছর ধরে কর্মহীন। আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ গত ৩-৪ বছর ধরে কর্মহীন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পক্ষে ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল বিজনেস (আইএসবি) পরিচালিত এক সমীক্ষা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিনেও বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীতে 'রানা প্লাজা দুর্ঘটনা: ট্র্যাজেডি থেকে ট্রান্সফরমেশন' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মৃত ও বেঁচে যাওয়া ২০০ শ্রমিকদের পরিবারের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের বেকারত্বের মূল কারণ তাদের শারীরিক অবস্থা। তবে এই হার গত বছর ছিল ৬৭ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। 

অন্যদিকে, ২১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাননি। 

সমীক্ষার ফলাফলে বেঁচে থাকাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে শারীরিক অবস্থা, মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা এবং আর্থিক অবস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল বিষয় তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ স্থিতিশীল দাবি করা জীবিতদের অনুপাত ২০১৪ সালে ছিল ১৭ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে এসে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। 

এ বছর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলছেন, তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে, যা ২০১৪ সালে ছিল ৯ শতাংশ।

উত্তরদাতাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বা ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ উল্লেখ করেছেন যে তারা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। এক চতুর্থাংশ বা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ মাথা ব্যথার অভিযোগ করেছেন। 

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাত ও পায়ে আঘাত, দাঁড়াতে ও সঠিকভাবে হাঁটতে না পারা, দৃষ্টিশক্তি ও কিডনির সমস্যার কথা জানিয়েছেন উত্তরদাতারা।

ইতিবাচক প্রবণতা সত্ত্বেও এখনো ২৯ শতাংশ মানসিক ট্রমার মধ্যে বেঁচে আছেন। মানসিক ট্রমায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ বলছেন, তাদের মধ্যে ভবন ধসে পড়ার ভয় কাজ করে। ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ তাদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

সমীক্ষার ফলাফলে আরও দেখা যায়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সেরে উঠেছেন ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তারা বর্তমানে পোশাক কারখানায় কর্মরত আছেন। গত বছর এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ।  

সমীক্ষায় আরও প্রকাশ পায়, বেঁচে যাওয়াদের ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১০-১৫ হাজার টাকা, ১৯ দশমিক ৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা এবং ১১ শতাংশের প্রতি মাসে আয় ২০ হাজার টাকার বেশি।

উত্তরদাতাদের বেশিরভাগের পরিবারের আয় তাদের পারিবারিক খরচ মেটাতে অপর্যাপ্ত। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৭ শতাংশ) তাদের মাসিক ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা এবং তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি ব্যয় মেটানোর জন্য কোনো সঞ্চয় নেই। 

সমীক্ষায় আরও ২০০ জন বর্তমান পোশাক শ্রমিকের কাছে তাদের কারখানায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ৮৪ দশমিক উত্তরদাতা ছিলেন নারী। 

উত্তরদাতাদের অর্ধেকের বেশি মনে করেন, কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত। ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কাজ করার ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান।  

প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা কারখানায় বিভিন্ন ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে আছে-যন্ত্রপাতি সমস্যা, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং আলোক স্বল্পতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব। 

উত্তরদাতাদের প্রায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বলছেন, তাদের কারখানায় অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের অভাব আছে। ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ বলছেন, তাদের কারখানায় জরুরি অগ্নি-নির্গমন ব্যবস্থা নেই। 

২০ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন, তাদের কারখানায় কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ জানিয়েছেন, সেখানে কোনো ডাক্তার বা নার্স নেই।

আলোচনা সভায় অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, 'রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অবস্থা জানতে প্রতিবারের মতো এবারও আমরা সমীক্ষা পরিচালনা করেছি। উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও তাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তেমন অর্থনৈতিক সুযোগ খুঁজে পায়নি। রানা প্লাজা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বিকল্প জীবিকা খুঁজতে সহায়তার প্রয়োজন।'

সভায় আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন বলেন, 'স্বীকার করতে হবে যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক শিল্পে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার একটি সংস্কৃতি তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া উচিত যেখানে শ্রমিকরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে এবং মালিকপক্ষ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

50m ago