উত্তরবঙ্গে ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া

ঈদের ব্যস্ততাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৯০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের ব্যস্ততাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৯০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

নন-এসি বাসগুলো বাড়তি ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের উদ্যোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ায় ঈদে ঘরমুখো মানুষ অর্থনৈতিক চাপে পড়েছেন।

প্রতি বছর রাজধানী ঢাকা ও এর পাশের গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে নিজ নিজ জেলায় যান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কখনই পরিবহনকর্মীদের এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

গত ৯ এপ্রিল এক বৈঠকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেন যে, পরিবহনকর্মীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া আদায় কমানো গেছে। কিন্তু, বন্ধ করা যায়নি। বাস স্টেশনে যেখানে মনিটরিং করা হয় সেখান থেকে দূরে গাড়ি রেখে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুসারে, ঈদকে সামনে রেখে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।

গত ১০ এপ্রিল বেসরকারি চাকরিজীবী সুজন আহমেদ হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাসের ২টি টিকিট কেনেন। তিনি আগামী ১৯ এপ্রিল রংপুর যাবেন। প্রতিটি টিকিটের জন্য তাকে অতিরিক্ত ৯০০ টাকাসহ ২ হাজার ৪০০ দিতে হয়েছে।

গতকাল তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকদিন আগেও প্রতি টিকিটের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক যাত্রী জানান, আগামী ১৭ এপ্রিল রংপুরে যাওয়ার জন্য তিনি এসআর প্লাস পরিবহনের টিকিট কিনেছিলেন গত ৯ এপ্রিল। এতে তার খরচ হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা।

'১৮, ১৯ ও ২০ এপ্রিলের টিকিটও ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই টিকিটের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা।'

সহজ ডট কম থেকে যারা অনলাইনে টিকিট কাটছেন তাদেরকেও বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে।

গতকাল গাইবান্ধা আলহামারা পরিবহনের এসি কোচের টিকিটের দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা। ১৮ এপ্রিলের জন্য এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

গতকাল পঞ্চগড়গামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি কোচের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। ১৮ এপ্রিলের জন্য এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকায়।

সহজ ডট কমের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ব্যবসা) জুবায়ের হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টিকিটের দাম বাস অপারেটররা ঠিক করেন। আমরা শুধুমাত্র টিকিট সেবা দিই। ভাড়ার বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।'

হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উত্তরবঙ্গগামী অন্যান্য এসি বাস অপারেটরদের মতো আমরাও ভাড়া বাড়িয়েছি। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও ঈদকে ঘিরে রাস্তায় যানজটের কারণে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।'

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুসারে সরকারের অনুমতি নিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া ঠিক করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এই আইনের ধারা ৩৪ (২) এ বলা হয়েছে—তবে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধাসম্বলিত গণপরিবহণের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

আইনে আরও বলা হয়েছে—'সরকার বা কর্তৃপক্ষ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ও বিশেষ সুবিধাসম্বলিত গণপরিবহণের ভাড়া যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণের যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।'

কিন্তু, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসি কোচের ভাড়া কখনই নির্ধারণ করে দেয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতির সুবিধা নিয়ে বাস অপারেটররা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন।'

নন-এসি বাসেও বাড়তি ভাড়া

অনেক নন-এসি বাস সার্ভিসও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

রাজধানীর মিরপুরে শ্রমিক আল-আমিন হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি শ্যামলী পরিবহনের রংপুরগামী বাসের টিকিট কেটেছেন ৬৫০ টাকায়। স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ৫০০ টাকা।

গাবতলী বাস টার্মিনালে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের এখনো অনেক দিন বাকি। অতিরিক্ত ভাড়া কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কাউন্টারে পরিবহন কর্মীরা সদুত্তর দিতে পারেননি।'

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গাবতলীতে সরকারের কোনো সংস্থাকে মনিটরিং করতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কম টাকা রাখি। এখন আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি। যাত্রীরা মনে করছেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটা সত্য নয়।'

এসি বাসের ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যেহেতু ঈদের সময় গাড়িগুলোকে ঢাকায় ফাঁকা ফিরতে হয় তাই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।'

সাধারণত প্রতি ঈদের আগে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এবার এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। কেননা, ট্রেনে টিকিট চেকিং জোরদার হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বাসের টিকিটের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Comments