গণস্বাস্থ্যের কর্মীদের বেতন হতো বাংলা মাসের ১ তারিখে

gonoshasthaya_kendra_logo.jpg
ছবি: সংগৃহীত

গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন মো. ইউসুফ হাসান (৩৩)। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও তিনি জানতেন যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব কর্মীর বেতন দেওয়া হয় বাংলা মাসের প্রথম দিনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও এর সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে বছরখানেক আগেও বেতন দেওয়া হতো বাংলা মাসের প্রথম দিনে। তবে খুব সম্প্রতি বিষয়টিতে পরিবর্তন এসেছে।

আর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সহযোগী সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনসহ অন্যান্য সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়।

গণ শিল্পালয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গণ শিল্পালয়ের প্রধান কাজ গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের শয্যা, ট্রলিসহ যাবতীয় সামগ্রী তৈরি করা। এই প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ মো. আবুল হাসান (৫০)।

আবুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ১৯৯০ সালে গণস্বাস্থ্যে যোগদান করি। তখন থেকেই বেতন পেতাম বাংলা মাস অনুযায়ী। তবে বছরখানেক যাবৎ আর বাংলা মাস অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয় না। ইংরেজি মাস ধরে বেতন দেওয়া হয়।'

'প্রথম থেকেই দেখে আসছি, গণস্বাস্থ্য দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো না। এখানে বাংলা মাসের শুরুতে আমরা বেতন পেতাম। এতে বাংলা মাসের একটা প্রচার হতো। বাংলা ক্যালেন্ডার আমরা মনে রাখতাম। সব হিসাব-নিকাশ বাংলা মাস অনুযায়ী হতো', বলেন তিনি।

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই কর্মী আরও বলেন, 'হঠাৎ করেই সব হিসাব আবার ইংরেজি মাসে করতে হচ্ছে। ৩০ বছরের অভ্যাস বদলাতে একটু কষ্টও হচ্ছে।'

তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান, সেটি হচ্ছে—গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কর্মীদের বেতনসহ সব ব্যয় হয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ইংরেজি ক্যালেন্ডার এবং বাংলা ক্যালেন্ডার দুটো হিসাব অনুযায়ীই চলি। বাংলা ক্যালেন্ডার মেনে আমরা আমাদের বার্ষিক, ষাণ্মাসিক, মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করি। আগে গণস্বাস্থ্যের সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাসিক বেতন বাংলা মাস হিসাব করে দেওয়া হতো।'

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বাংলা মাসে হিসাব-নিকাশের পরিবর্তে এতদিন পরে কেন ইংরেজি মাসে যেতে হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বার্ষিক আর্থিক হিসাব ও অডিটের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ইংরেজি মাসের হিসাবে যেতে হয়েছে। অডিট রিপোর্ট আমাদের ইংরেজি বছরের হিসাবেই জমা দিতে হয়। এ কারণে এখন কর্মীদের মাসিক বেতনও ইংরেজি মাস হিসাব করে দেওয়া হয়। তবে আমাদের নারীকেন্দ্রের মতো কয়েকটি ছোট বিভাগে এখনো বাংলা মাস ধরে বেতন দেওয়া হয়।'

মঞ্জুর কাদের আহমেদ আরও বলেন, 'বছরখানেক আগে এই পরিবর্তনটা হয়েছে। সূচনালগ্ন থেকে যে বাংলা বছর ও মাসের হিসাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালিত হতো, ২০২২ সালের প্রথম দিকে তা পরিবর্তন হয়। আমাদের দাপ্তরিক কাগজপত্র সরকারি দপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র শুরু থেকেই দেশের একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় ও অডিটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে এখন আমাদের ইংরেজি বছরে হিসাব করতে হচ্ছে। আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদন, বার্ষিক সভা এখনো বাংলা মাস ধরে হয়,' বলেন তিনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, 'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র শুরু থেকেই দেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছিল। প্রথম থেকেই এখানে ব্যাংকের মাধ্যমে সব কর্মীদের বেতন এবং  অন্যান্য যত লেনদেন আছে, সবই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। ৭০ এর দশকে শুরু থেকেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের লেনদেন জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আমরা শুরু থেকেই আমাদের কর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করি।'

সূচনালগ্ন থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত আছেন এর ট্রাস্টি সন্ধ্যা রায়। জানতে চাইলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুরু থেকেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের বেতনসহ সব লেনদেন জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে আসছে। কখনো নগদ লেনদেন হয় না। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত এলাকায় জনতা ব্যাংক না পেলে, অন্য সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।'

বাংলা মাস ধরে বেতন দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা শুরু থেকেই বাংলা মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিয়ে আসছিলাম। কিছুক্ষেত্রে ১ তারিখে না পারলেও বাংলা মাসের ২ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়ার চেষ্টা করতাম। তবে, সম্প্রতি এটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন ইংরেজি মাসের হিসাব অনুযায়ী দেওয়া হয়।'

মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল' পরিবর্তিত হয়ে 'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র' নামে যাত্রা শুরু করে ১৯৭২ সালে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি পাবলিক ট্রাস্ট। কোনো ব্যক্তি এর মালিক নন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এর প্রতিষ্ঠাতা হলেও, তিনি নিজেকে এর একজন কর্মী হিসেবেই পরিচয় দিতেন। নিজ হাতে তিনি একটু একটু গড়ে তুলেছেন ব্যাতিক্রমধর্মী এই প্রতিষ্ঠানটিকে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago