রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা দেখতে পেয়েছি: আরআরআরসি কমিশনার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তারা বাংলাদেশের টেকনাফ জেটিতে ফিরেছে প্রতিনিধিদল। ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে রয়েছে, তা দেখতে আজ শুক্রবার মংডু পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা নাগরিকসহ ২৭ সদস্যের একটি একটি প্রতিনিধিদল।

বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তারা বাংলাদেশের টেকনাফ জেটিতে ফিরে আসেন।

পরিদর্শনের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি খারাপ কিছু দেখিনি। আমরা মংডু শহরে দেখেছি প্রচুর রোহিঙ্গা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তাদের সঙ্গে আমাদের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা কথাবার্তা বলেছে, দেখা করেছে। আমি যতদূর তথ্য পেয়েছি, সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা রয়েছে।'

পরবর্তী উদ্যোগ কী, কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পরবর্তী উদ্যোগ হচ্ছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখানে আসবে। এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরও কথা বলবে। সবকিছুই করা হচ্ছে তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার জন্য, তাদের আশ্বস্ত করার জন্য। মিয়ানমার থেকে প্রতিনিধিরা কবে আসবে, সেই তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। আগে তারা আসবেন, তারপরের পদক্ষেপ হচ্ছে প্রত্যাবাসন। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা আশাবাদী যে প্রত্যাবাসন টেকসই হবে।'

'প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দাবি করা হচ্ছে প্লেস অব অরিজিন অথবা নিয়ারবাই (নিজ ভিটায় বা এর আশেপাশে জায়গায়), এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারেনি। কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো প্লেইস অব অরিজিন (নিজ ভিটায়) হবে, কারো কারো ক্ষেত্রে নিয়ারবাই (আশেপাশে জায়গায়) হতে পারে। এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে হবে।'

পরিদর্শনের বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা মো. সেলিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মিয়ানমার যাওয়ার পর তারা ক্যাম্প দেখিয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, এই ক্যাম্পগুলো কাদের জন্য? তারা বলল, আপনাদের জন্য। তাহলে আমরা তো নিজের দেশে স্বাধীনতার অনুভূতি পাচ্ছি না, নাগরিকের সম্মান পাচ্ছি না।'

'তারা আমাদের বলল অ্যাম্বেসি কার্ড নিতে হবে। অ্যাম্বেসি কার্ড আমরা নেব না। অ্যাম্বেসি কার্ড মেহমানদের জন্য হয়। আমরা যদি মিয়ানমারে অ্যাম্বেসি কার্ড নিই, তাহলে আমরা সেখানকার কোনো নাগরিক না, বাসিন্দা না। মিয়ানমার সরকার আমাদেরকে জায়গার মালিক হতে দেবে না। ভিটার মালিক হতে দেবে না,' বলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের দাবির বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী বলেছে, জানতে চাইলে এই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বলেন, 'তাদের প্রশ্ন করলে তারা আমাদের বলেছে, আগে অ্যাম্বেসি কার্ড নিতে হবে, নেওয়ার ৫-৬ মাস পর আস্তে আস্তে ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারবে। আমরা বলছি আমরা ক্যাম্পে থাকব না। আমাদের দেশে, আমাদের গ্রামে, আমাদের ভিটাতে নিতে হবে। আমাদের টাকা-পয়সা দিতে হবে না। আমরা নিজের ভিটায় নিজ খরচে ঘর বেঁধে নেব।'

'আমরা এই পরিস্থিতিতে সেখানে ফেরত যাব না। মিয়ানমারে ৩৬ জাতি আছে, ৩৫ জাতি একরকম করে চলছে আর আমাদের মুসলমান জাতিকে অন্যরকম করে চালাচ্ছে। আমরা যেন সৎ মায়ের ছেলে। ৩৫ জাতি নাগরিকত্ব নিয়ে সে দেশে পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা সব করতে পারলে আমরা পারব না কেন? আমাদের জাতিতেও শিক্ষিত লোকজন আছে, বড় ডিগ্রি আছে এমন ছেলেমেয়ে আছে কিন্তু দেশে চাকরি পায় না, চাকরি দেয় না। যদি নাগরিকত্ব দেয়, নিজের জায়গা জমি, ভিটা ফিরিয়ে দেয়, তাহলে অবশ্যই যাব। বাংলাদেশ আমাদের স্থান দিয়েছে সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের দাবি-দাওয়া যদি মেনে নেয় তাহলে মিয়ানমারে আমরা অবশ্যই ফেরত যাব,' বলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের অসন্তুষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'এমন কথা বললে তো সমস্যা সমাধান কখনোই হবে না। ২ পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। এটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা হয়েছে। সন্তুষ্টির বিষয়টি আপেক্ষিক। যে সমস্যার ৬০-৭০ বছর ধরে সমাধান হচ্ছে না, তার সমাধান দুয়েকদিনে হবে না। আমরা প্রত্যাবাসনটা শুরু করতে চাই। প্রত্যাবাসন যাতে টেকসই হয়, সেজন্যই এই পরিদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে।'

'বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি বরাবরই ছিল যে এটি যাতে টেকসই হয়, স্বেচ্ছাকৃত (ভলানটারি) হয় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়। সেই নিরীখে মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল যে যারা প্রত্যাবাসিত হবে সেই রোহিঙ্গাদের যাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেসব দেখানো হয়। সেজন্য আজ আমরা পরিদর্শনে যাই। আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে, রাজি হয়েছে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-led interim govt takes charge

2 months of interim govt: Hopes still persist

The interim government had taken oath two months ago with overwhelming public support and amid almost equally unrealistic expectations.

55m ago