নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশে আসছে বড় পরিবর্তন

রদবদল হবে মূলত জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) পদে।
আবারও ব্যাংক ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও পুলিশে বড় ধরনের রদবদল হতে চলেছে। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে, এজন্য অনেকেই একে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।

রদবদল হবে মূলত জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) পদে।

এছাড়া জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগে বড় ধরনের রদবদল হবে।

ডিসি এবং এসপিরা বদলি হওয়ার আগে প্রায় ৩ বছরের জন্য একটি জেলায় নিযুক্ত হন। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং এসপিরা নিজ নিজ জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র জানায়, জেলাগুলোতে সরকার শিগগিরই নতুন ডিসি ও এসপি নিয়োগ দিতে চায়, কারণ তারা যেখানে কাজ করবেন তার সাথে পরিচিত না হলে নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন না।

পুলিশ বিভাগে রদবদলের ফলে ৭২০ জন শীর্ষ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার ইন-সিটু প্রমোশন (একই পদে অধিষ্ঠিত এবং পদোন্নতির পরে একই দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা) দেখা যাবে।

পুলিশ সদরদপ্তর ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তরের সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে আনতে চায়।

প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশ সদরদপ্তর ১৫তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ১৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে (গ্রেড-২) অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি চেয়েছে।

প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ৬ জন কর্মকর্তা পুলিশ সদরদপ্তরে এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে সিআইডি, পুলিশ টেলিকম, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এছাড়া পুলিশ সদরদপ্তর ১৭তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ৩৪ জন ডেপুটি আইজিপিকে অতিরিক্ত আইজিপি, ২২তম ব্যাচের ১৫৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি পদে, ২৪তম ব্যাচের ২৬৬ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৮তম ও ২৯তম ব্যাচ থেকে ২৪৭ জন অতিরিক্ত এসপিকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব করেছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব পদোন্নতি দেওয়া হলে  সরকারের বছরে ২ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

আমলাতান্ত্রিক পদমর্যাদায় ইতোমধ্যে ২২তম ব্যাচের ক্যাডারদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রশাসনিক সংস্থা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি সভা করে, যা সরকারি কর্মচারীদের চাকরির রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে তাদের উচ্চ পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পদোন্নতি জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর হতে পারে।

সরকার ২০ থেকে ২২ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করে প্রায় ২৫ জন নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে পারে, যাদের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে তাদের মেয়াদ শেষ করেছেন। দুই থেকে তিন জন ডিসিকে বদলি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অধিকাংশ ডিসি ২৭তম ব্যাচ থেকে পদায়ন করা হবে, যাদের নিয়োগ ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ২৫তম ব্যাচের কয়েকজন ডিসিকে পদায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে ডিসি হিসাবে নিযুক্ত ১৫ সরকারি কর্মকর্তাই ২৫তম ব্যাচের।

বর্তমানে ৬৪ টি জেলার মধ্যে ২০ জন ডিসি ২২ তম ব্যাচের, ২৯ জন ২৪ তম ব্যাচের এবং ১৫ জন ২৫ তম ব্যাচের। ২২তম ব্যাচের ডিসিরা তাদের মেয়াদ শেষ করেছেন।

গত ১২ মে ১১৪ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। এ পদোন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪২০ জন। এছাড়া দুই কর্মকর্তাকে গ্রেড-১-এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই ১৭তম ব্যাচের। তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ১৫তম এবং অন্যান্য ব্যাচের ছিলেন যারা আগের পদোন্নতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা কর্মকর্তাদের ইন-সিটু পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং এটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

রদবদলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। তিনি আরও বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রদবদল করা হবে।

এদিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ইতিমধ্যে ৩১ মে নতুন কমিশনার পেয়েছে এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ শিগগিরই নতুন কমিশনার পাবে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের ৩ আগস্ট ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দেওয়া হয়।

নতুন পদায়নের জন্য ইতোমধ্যেই ২০ থেকে ২৫ জন এসপির জন্য একটি নতুন তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৫তম এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা পদায়নের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন বলে পুলিশ সদরদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সময় ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ দেওয়া হয়।

যদি রদবদল করা হয়, অন্তত অর্ধ ডজন এসপিকে নতুন পদে বদলি করা হবে বলে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত। বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Comments