চট্টগ্রামে ‘কৌশল পাল্টেছে’ পুলিশ, ‘সতর্ক’ বিএনপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমালোচনা এবং বিতর্ক এড়াতে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘিরে কৌশল পাল্টেছে পুলিশ। তবে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে সরাতেই এখন কাজ করছে পুলিশ। যাতে নির্বাচনের সময় তৃণমূল বিএনপি ও এর অঙ্গ সগঠনের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে না পারে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সভা-সমাবেশ, মিছিল, পথ সভা ও জনসমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখছে নগর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

এ বছরের শুরুতে ১৬ জানুয়ারি নগরীর কাজির দেউড়ি নসিমন ভবনের সামনে সমাবেশের সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পুলিশ নগর বিএনপির আহবায়ক, সদস্য সচিব, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামাসহ ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এরপর ছোট পরিসরে নগর বিএনপির কার্যালয় নসিমন ভবন ও এর সামনে নানান সভা সমাবেশ করেছে বিএনপি।

আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি ও রাজনীতির মাঠ সরগরমের মাঝেই গত ১৪ জুন কাজির দেউড়ি এলাকায় তারুণ্যের সমাবেশ করে আবারো নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে নগর বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আমির খসরু মাহমুদ, মীর নাসির, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ অনেক নেতা।

এই সভা চলাকালেই চট্টগ্রাম কলেজের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় যুবদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জামালখানে ভাঙচুর করা হয় জাতির জনকের ছবি, ম্যুরাল ও দেয়ালিকা।

চট্টগ্রাম কলেজের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মী ও জামালখানের ঘটনায় পুলিশ ১৩৮ নেতাকর্মীসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ও ভাঙচুরের ২টি মামলা করে। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৪ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মী।

তবে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করলেও এবার নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাতসহ সিনিয়র বিএনপি নেতাদের নাম জড়ায়নি পুলিশ। এর আগে ২৯ মে একই ভাবে চান্দগাও থানায় পথ সভা থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সিনিয়র নেতাদের নাম নেই।

নগর পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সমালোচনা ও বিতর্ক এড়াতেই সিনিয়র নেতাদের সরাসরি আসামি করা হচ্ছে না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমালোচনা ও বিতর্ক এড়াতে সিনিয়র কাউকে মামলার আসামি করা হচ্ছে না—এ কথা সত্য কি না, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আসম মাহতাব উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছি তাদেরকেই আসামি করেছি। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ সামনে প্রমাণ হয় বা কারো নির্দেশে বা প্ররোচনায় এই ঘটনায় হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকেও ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।'

'সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা আসামি শনাক্ত করেছি। এখানে আলোচনা বা সমালোচনা এড়ানোর জন্য কিছুই করা হয়নি,' বলেন তিনি।

এক মামলায় পুলিশ, অন্য মামলায় ছাত্রলীগ কর্মীর বাদী হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা দেখি অপরাধের ধরণ কি ও আবেদনকারী কে, অন্য কিছু না। চকবাজার থানায় যিনি মামলা করেছেন তিনি একজন ব্যক্তি। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। এখানে তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রধান নয়।'

তবে নগর পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনিতেই চাপে আছে পুলিশ। এখন মামলায় যদি সিনিয়র নেতারা আসামি হন, তাহলে তা নিয়ে আবারো কথা হবে এবং এতে বাইরের দেশগুলোর কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। তাই তাদের আসামি করতে ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হচ্ছে।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে রাজনীতি করি। তারাই আমাদের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। এর আগে আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, ঘটনাস্থলে আমি না থাকার পরও।'

তিনি বলেন, 'এবার যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা ১৪ জুন আক্রান্ত হয়েছেন। উপরন্তু তারাই এখন মামলার আসামি। আবার ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা সেখানে ছিলেনই না। যারা তৃণমূলে আমাদের সমর্থকদের সংগঠিত করে, তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর কারণ, তারা যাতে নির্বাচনের সময় মাঠে থাকতে না পারেন।'

শাহাদাতের দাবি, 'গত বছর পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের তালিকা করেছে এবং সেই তালিকা ধরে ধরে নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।'

'আমার কর্মীরাই যদি মাঠে না থাকে, তাহলে আমি কীভাবে রাজনীতি করবো? আমাদের একা করে দিতেই পুলিশ এখন এই পন্থা নিচ্ছে। একদিকে নতুন মামলা ও অন্যদিকে পুরাতন গায়েবি মামলার চার্জ গঠন করে আদালতে আমাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে,' অভিযোগ শাহাদাতের।

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

3h ago