বিদেশিরা আপনার মঙ্গল চায় না, তারা চায় অশান্তি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর বিশ্বাস করি। জনগণের রায়েই আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।’
মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। স্টার ফাইল ফটো

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, 'বিদেশিরা আপনার মঙ্গল চায় না। তারা আপনার এখানে অশান্তি চায়।'

তিনি বলেছেন, 'অশান্তি হলে দেশ যদি দুর্বল হয়, তাদের অনেক সুবিধা হয়।  তাই তারা দেশকে দুর্বল করতে চায়। তাদের ওই ভেল্কিতে অবগাহন করবেন না। দেশের উন্নয়ন দেশের লোক, সরকার করবে।'

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, 'আমরা সবাই চাই একটি সুন্দর, শান্তিময়, উন্নত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। আর সে কারণে অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে আগামী নির্বাচনের জন্য মূল প্রতিপাদ্য করে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ সব দেশে নির্বাচনের মূল আলোচ্য বিষয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি।'

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গত ৬ মাসে প্রায় ৬০টি দেশে নির্বাচন হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২২টি দেশে নির্বাচন হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে তাদের অনেক আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু প্রায় শ'খানেক দেশ যেগুলোতে সম্প্রতি নির্বাচন হয়েছে এবং আগামীতে হবে সেগুলো নিয়ে তাদের কোনো আলোচনা নাই।'

'এর একটি অর্থ হচ্ছে আমাদের দেশের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে তাই সবার আকর্ষণও বেড়েছে,' যোগ করেন তিনি।

তবে একইসঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, 'বিদেশি লোক আপনার মঙ্গল চায় না। তারা আপনার এখানে অশান্তি চায়। অশান্তি হলে দেশ যদি দুর্বল হয়, তাদের অনেক সুবিধা হয়। তাই তারা দেশকে দুর্বল করতে চায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর বিশ্বাস করি। জনগণের রায়েই আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের সাম্প্রতিক যে উন্নয়ন এবং তার ধারাবাহিকতা কীভাবে বজায় রাখা যায় সেই ইস্যুগুলো তুলে ধরা জরুরি। যেহেতু সামনে নির্বাচন, এখন এসব বিষয় আলোচনায় আশা উচিত।' 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপির শাসনামলের সাথে আওয়ামী লীগের শাসনামলের তুলনা করে বলেন, '২০০১ থেকে ২০০৬ আমাদের অর্থনীতির অবস্থা কেমন ছিল, আমাদের সামাজিক অবস্থা কী ছিল, আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কতটুকু বিস্তৃত ছিল, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কীরকম অগ্রগতি ছিল। এগুলোর সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০২৩ এর অগ্রগতির তুলনামূলক বিচার করে দেখুন।'

ড. মোমেন বলেন, 'রাজনীতি হলো দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য। যদি তাই হয় তাহলে কাকে আপনি যুক্তিযুক্তভাবে সঠিক নেতৃত্ব মনে করেন, সেটা আপনাকেই বিচার করতে হবে। আপনারা যদি দেশের মঙ্গল চান, অর্থনৈতিক মঙ্গল, সামাজিক মঙ্গল এবং জাতির অবস্থান, তাহলে কাকে আপনাদের ভোট দেয়া উচিত এগুলো বিবেচ্য বিষয়। এগুলো যদি সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেন তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের দায়ী করবে না। নতুবা তাদের কাছে আমাদের দায়ী থাকতে হবে।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আগামী নির্বাচন হবে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর এবং আমি বিশ্বাস করি বাঙালি জাতি অত্যন্ত পরিপক্ক জাতি। তারা যখন ভোট দেয় তখন সঠিক জায়গায় ভোট দেয়।'

উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'যেসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আছে সেসব দেশে উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি হয়।'

তিনি সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'সিঙ্গাপুরে ৬৫ বছর ধরে স্থিতিশীলতা থাকায় দরিদ্র দেশ থেকে এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থিতিশীলতার কারণে উন্নয়ন অগ্রগতিতে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রুয়ান্ডা ও কম্বোডিয়ার মতো দেশ স্থিতিশীলতার কারণেই উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে।'

'অপরদিকে যেসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তি শৃঙ্খলা নাই সেসব দেশের ভরাডুবি হয়েছে। তিনি ইরাক ও লিবিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, স্থিতিশীলতা না থাকায় ঐসব দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে,' বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা দেশে মারামারি কাটাকাটি চাই না, শান্তি স্থিতিশীলতা চাই। আমরা দেশে এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। আমরা যদি শান্তি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমরা যদি শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় রেখে শেখ হাসিনার সরকারকে জয়যুক্ত করতে পারি, তাহলে শেখ হাসিনার শাসনামলে যে উন্নয়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা চালু থাকবে। আর অন্যথা হলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তখন বাংলাদেশের পরিচয় ছিল সন্ত্রাসের দেশ, দুর্নীতিতে পাঁচ-পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন, নারী-পুরুষ কারও নিরাপত্তা ছিল না। যেখানে একদিনে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলায় বোমাবাজি হয়েছিল, আদালতের এজলাসে বোমাবাজি করে মানুষ মারা হয়েছিল, তখন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের উপর বোমাবাজি হয়েছিল, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করায় বিরোধী দলের নেতার উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল যেখানে ২৪ জন মানুষ মারা যায় ৩৭০ জন মারাত্মকভাবে আহত হয় - আমরা সেই বাংলাদেশ আর দেখতে চাই না।'

ইয়েমেনে ১৮ মাস অপহৃত থাকার পর জাতিসংঘের কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুফিউল আনামের উদ্ধার হওয়ার সংবাদ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নির্দেশনায় আমরা তাকে উদ্ধার করতে পেরেছি, আর এটা সম্ভব হয়েছে সব দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে।'

বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী।

Comments