বিবেক কোথায়?

রাজধানীর আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডের শুরুতে সড়কদ্বীপের ওপর বসানো নামফলকের পেছনে আঁকা হয়েছে নতুন এই দেয়ালচিত্রটি। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

বিবেকের হদিশ মিলছে না। জনস্রোতে ভেসে যাওয়া তীব্র অসাম্যের এ ঢাকা মহানগরের গলিঘুঁজি, পথঘাট, বৃক্ষহীন বিস্তৃত অ্যাভিনিউ, সুউচ্চ বহুতল, সংসদ, সচিবালয়, হাসপাতাল, থানা, পার্ক, মাঠ, বাজার, শপিংমল, আস্তাকুঁড় কিংবা বস্তির কুঁড়ে—কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না একে। তাই, মানব মনের সহজাত এই প্রবৃত্তির খোঁজ পেতে কারা যেন নিশ্চুপ দেয়ালে আঁকা চিত্রে-বার্তায় জানতে চাইছে বিবেকের খোঁজ।

ভয়ের রাজ্যে গলার স্বর উঁচুতে চড়ে না। কারণ দেয়ালেরও 'কান' আছে। কিছু একটা টের পেলেই 'রাজার কাছে খবর ছোটে, পল্টনেরা লাফিয়ে ওঠে'। তাই ঝুঁকি অনেক। তবু অতি সন্তর্পনে শহরের এসব 'কানপাতা' দেয়ালেই ভাষা ফোটানোর স্পর্ধা দেখায় কেউ কেউ।

রাজধানী আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডের শুরুতে ডান পাশের দেয়ালে আঁকা একটি চিত্র চোখে পড়ে সম্প্রতি। কাছাকাছি সড়কদ্বীপের ওপর বসানো নামফলকের পেছনেও দেখা যায়, চিত্রিত 'বিবেক' শব্দটির ই-কারের ওপর বসে আসে একটি কালো কাক। নিচে লেখা, 'বিবেক কোথায়?'

একই চিত্র আঁকা হয়েছে আগারগাঁও-মহাখালী লিংক রোডের পাশের একটি দেয়ালে। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এ ধরনের দেয়ালচিত্র পরিচিত গ্রাফিতি নামে। বাজারি শিল্পকলার বাইরে এ শিল্পকর্মগুলোর মূল উপজীব্য সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক ঘটনা। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ভেতর দিয়ে কখনো এগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয় যুদ্ধবিরোধী বক্তব্য কিংবা শান্তির বার্তা। কখনো এটি হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, প্রচলিত নীতি কিংবা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শৈল্পিক রূপ। আবার কখনো বিভিন্ন নাগরিক অধিকার আদায়ের হাতিয়ার।

বছর ছয়েক আগে ঢাকার দেয়ালে এ ধরনের কিছু দেয়ালচিত্রে দেখা মিলেছিল পলায়নপর যুবক 'সুবোধ'কে। সময়টা তার পক্ষে যাচ্ছিল না। তাই চিত্রে-বার্তায় সে তার পলায়নের চিহ্ন রেখে যাচ্ছিল নগরের দেয়ালে দেয়ালে।

ঢাকার দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকার সেই শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেখা মিলল জয়নুলের কাকের রূপ ধরে বিবেকের খোঁজ জানতে চাওয়া উপরের দেয়ালচিত্রটি।

ফরাসি দার্শনিক জঁ-জ্যাক রুশো বিবেককে অভিহিত করেছিলেন 'আত্মার স্বর' হিসেবে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের পরে পাশ্চাত্য দর্শনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও মৌলিক দার্শনিক হিসেবে বিবেচিত ইমানুয়েল কান্ট বলছেন, 'বিবেক হল মানুষের এমন এক প্রবৃত্তি (ইন্সটিংক্ট) যার অকাট্য নৈতিক নির্দেশে মানুষ নিজেকেই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তার নিজের কৃতকর্মের ন্যায়-অন্যায়ের বিচার করে।'

আধ্যাত্মিক মানবতাবাদী হিসেবে পরিচিত রামকৃষ্ণ মনে করতেন, 'সৎ বিচারের নামই হচ্ছে বিবেক'।

আলোচিত ‘সুবোধ’ সিরিজের এই চিত্রটি আঁকা হয়েছিল ২০১৭ সালে; আগারগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরের দেয়ালে। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্পের এক তাৎপর্যপূর্ণ চরিত্রের নামও 'বিবেক', যিনি কখনো দরবেশ, কখনো সন্ন্যাসী কিংবা পাগলের বেশে মঞ্চে আসেন। খোদা, ভগবানের নাম ধরে আবেগমাখানো সুরে সত্যের বাণী শুনিয়ে যান। গানের ভেতর দিয়ে সাবধান করে দেন অত্যাচারী রাজাকে।

ময়মনসিংহের যাত্রাশিল্পে এক সময় বিবেক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন গৌরাঙ্গ আদিত্য। তার ভাষায়, 'মানুষের অন্তরে মন ও বিবেক থাকে। মন যা হোক তাই করে ফেলতে বলবে, আর বিবেক তা নিয়ন্ত্রণ করবে। বিবেক বলে উঠবে—তুই করিস নারে ভুল।'

বাংলার যাত্রাশিল্প এখন মৃতপ্রায়। তাই সেই বিবেকদেরও দেখা পাওয়া যায় না তেমন। তাহলে কি অপসৃয়মান এই বিবেকদের মতো মনুষ্যবিবেকও হারিয়ে যাচ্ছে? নতুন দেয়ালচিত্রের আঁকিয়েরা কি এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন?

এসব প্রশ্নের জবাব মেলে না। কারণ, গ্রাফিতি আঁকিয়েদের পরিচয় জানা যায় না। তারা কাজ করেন গোপনে, সন্তর্পনে।

দেয়ালচিত্রে জয়নুলের সেই কাকই কি ফিরে এল?

আল মাহমুদের কবিতায় আমরা কাককে অভিহিত করতে দেখি 'নগর শকুন' হিসেবে। এই কাকই কখনো উড়ে এসে জুড়ে বসে কাইয়ুমের প্রচ্ছদে। কখনো এদের দেখা যায় তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষে কলকাতার ফুটপাতে শিল্পাচার্যের আঁকা আধমরাদের ছবিতে।

জয়নুলের ছবিতে কাকের এমন উপস্থাপনকে লেখক দেবকুমার সোম বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে- 'গৃহস্থ জীবনের রকমারি অনুষঙ্গে নিঃসঙ্গতার রূপ পায় কালো, অসুন্দর এই নাগরিক পাখি। তেতাল্লিশের মানুষ-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ফুটপাতে মৃতপ্রায় মানুষের ছবিতে জয়নুলের একক কাক আসন্ন মৃত্যুর নিঃসঙ্গতাকে ধরতে চেয়েছে। এ-সব ছবিতে কাককে প্রায় বসে থাকতে দেখি। সে যেন যমদূত। যেন মৃত্যুর প্রতীক্ষায়।'

সুবোধের খাচাবন্দি সূর্য আর আশাবাদের প্রতীক মোরগ। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

জয়নুলের কাককে একইসঙ্গে 'যথেষ্ঠ কালো ও বেয়াড়া' হিসেবে দেখতে চেয়েছেন দেবকুমার সোম। তিনি বলছেন, 'সস্তার প্যাকিং কাগজে ভুষোকালির রঙ মোটা ব্রাশে টেনে জয়নুল যেন তখনকার ব্রিটিশ প্রশাসনকে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন। তাই অপছন্দের পাখি চরিত্রগতভাবে তার তখনকার ছবিতে মৃত্যুর মতো ক্রূর। অবিবেচক।'

ঢাকার নতুন গ্রাফিতিতে সরাসরি এ ধরনের কোনো বার্তা না থাকলেও বিদ্যমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে।

এখন সেই মন্বন্তর নেই। তবে সারাদেশে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৬৪ জনের। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা এটিই।

বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে ঢাকার হাসপাতালগুলোর মেঝেতেও আর বিছানা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। আগস্টের শুরু থেকে প্রতিদিনই গড়ে ১০ জনের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। প্রিয়জন হারানোর শোকে মুহ্যমান স্বজনদের আহাজারিতে ভরে উঠেছে টেলিভিশনের পর্দা আর সংবাদপত্রের পাতা। তবু সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করছে, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে'।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠতেই পারে­- বিবেক কোথায়?

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সার সরবরাহকারীদের পাওনা ছিল ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। সার আমদানি করতে যে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা দরকার, তারও সংকট চলছে।

অন্যদিকে, জ্বালানি আমদানিতেও প্রয়োজনীয় মার্কিন ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতও পণ্য আমদানি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। রাজস্ব আদায় যথেষ্ট পরিমাণে না হওয়ায় বিদ্যুৎ-সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির টাকাও যথাসময়ে দিতে পারছে না সরকার। এর ওপর আছে ব্যাংক খাতের সম্পদ হ্রাস, পুঁজির দেশান্তর, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো সামষ্টিক অর্থনীতির নানামুখী সমস্যা।

প্রাচীরের ক্যানভাসে আঁকা বিষাদগ্রস্ত এক কিশোরীর অবয়ব। ২০১৮ সালে এই চিত্রটি আঁকা হয়েছিল কাকলীর পদচারী–সেতুর পুব দিকের দেয়ালে। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এমন অর্থনৈতিক সংকটের ভেতরেও নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দেড় কোটি টাকার গাড়ি কেনার পথ খুলে দিয়েছে সরকার। এখানেও প্রশ্ন উঠতে পারে, বিবেক কোথায়?

গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, বর্তমানে বিচারাধীন মামলার জট ৪০ লাখ। তনু হত্যা, ত্বকী হত্যা, সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো আলোচিত মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ বার বার পেছাচ্ছে। পার হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিবেক কোথায়?

এদিকে 'মৃত্যুর মাইনফিল্ড' হয়ে ওঠা সড়কে-মহাসড়কে প্রাণ ধরছেই। গুম, অবহেলায় মৃত্যু, নির্যাতনে মৃত্যু, অভাবে মৃত্যু– এমন অনেক মৃত্যুর শোক বুকে নিয়ে চলা মানুষের সংখ্যা বাড়ছেই। কোনো প্রতিকার নেই।

এখানেও প্রশ্ন উঠতে পারে, বিবেক কোথায়?

বাংলাদেশে গ্রাফিতির পূর্বাপর

আগারগাঁওয়ে নতুন দেয়ালচিত্রটি আঁকার ধরন দেখে বোঝা যায়, সুবোধ সিরিজের মতোই এটিও আঁকা হয়েছে স্টেনসিল (লেখা বা আঁকার জন্য ছিদ্রময় পাত) ব্যবহার করে। এই পদ্ধতিতে স্প্রে করে দ্রুত আঁকার কাজ করা যায়। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গ্রাফিতি আঁকিয়ে ব্যাংসি (Banksy) স্টেনসিল ব্যবহার করে গ্রাফিতি আঁকেন।

কলকাতার মনফকিরা থেকে প্রকাশিত গ্রাফিতি এক অবৈধ শিল্প নামের গ্রন্থে লেখক বীরেন দাশ শর্মা গ্রাফিতিকে বলছেন, 'এক অর্থে গ্রাফিতি সাহিত্য না হয়েও লেখার শিল্প, চিত্রকলা না হয়েও অঙ্কনশিল্প।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের দেয়ালে আঁকা। ২০১৮ সাল। ছবি: প্রথম আলো

বস্তুত গ্রাফিতি-শিল্পীদের কাছে পৃথিবীর সব দেয়ালই একেকটা ক্যানভাস। বিভিন্ন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটা শিল্পিত মাধ্যম হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্রাফিতি খুবই জনপ্রিয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোতে গ্রাফিতি অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠোর নজির আছে। দিল্লির ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন, ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন কিংবা যাদবপুরে শিক্ষার্থী নিগ্রহের প্রতিবাদে 'হোক কলরব' আন্দোলনেও ছিল গ্রাফিতির জোরালো উপস্থাপন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ব্রাজিল বিশ্বকাপে পথশিল্পী পাওলো ইতোর আঁকা একটি গ্রাফিতিতে ক্ষুধার্ত শিশুর সামনে ফুটবলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়। এটি আঁকা হয়েছিল আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের অমিতব্যয়ী আচরণের প্রতিবাদ হিসেবে। ২০১৮ সালে ব্যাংসি প্যারিসে এমন ১২টি দেয়ালচিত্র আঁকেন; যার মাধ্যমে ইউরোপের বিতর্কিত অভিবাসন ইস্যু, ফ্রান্সে হিজাবের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়।

ঢাকার দেয়ালে এই গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে আলোচিত 'সুবোধ' সিরিজের মাধ্যমে। প্রথম দিকে ধানমন্ডি, আগারগাঁও ও মিরপুরের দেয়ালে আঁকা সুবোধ কখনো ছিল হাতে বাক্সবন্দী সূর্য নিয়ে পালাতে উদ্যত, কখনো জেলে বন্দী, কখনো হতাশায় নুয়ে পড়া এক মানুষ।

সুবোধের এই দেয়ালচিত্রগুলো প্রকাশের পর থেকেই তা অনেক মানুষের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে চিত্রগুলো। সেখানে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন সুবোধ এবং এর আঁকিয়ে কিংবা আঁকিয়েদের পরিচয় জানতে। সুবোধ উঠে আসে অনেক তরুণের টি–শার্টে। এদিকে ঢাকার দেয়ালে আঁকা 'সুবোধ' সিরিজের গ্রাফিতিগুলোর অনুপ্রেরণায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্যাম্পাসে চিত্রিত করেন একাধিক গ্রাফিতি।

রোকেয়া হলের দেয়ালে আঁকা। ২০১৮ সাল। ছবি: প্রথম আলো

ওই শিক্ষার্থীরা ঢাকার 'সুবোধ' কে হাজির করেন তাদের দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে।

সুবোধের আলোচিত এই সিরিজের পর ঢাকার দেয়ালগুলো ভরে উঠতে থাকে একের পর এক গ্রাফিতিতে। কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার পরপর নিশ্চুপ দেয়ালে আঁকা বিষয়ভিত্তিক এই চিত্রগুলো হাজির হয় নতুন নতুন বার্তা নিয়ে।

২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হলের দেয়ালে আঁকা দুটি গ্রাফিতি ব্যক্তিপরিসর ছাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ছড়ায়। এর একটি মূর্ত করে তুলেছিল সিংহাসন ফুটো করে বেরিয়ে আসা একটি পেনসিলের চোখা প্রান্ত। পাশে লেখা ছিল, 'উফ্​!' আরেকটি চিত্র বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর রাখা ছিল রিমান্ড কক্ষের বাতি। পাশে মোটা হরফে লেখা ছিল, 'বাংলাদেশ রিমান্ডে'।

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনে গুরুতর আহত এহসান রফিকের গ্রাফিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের দেয়ালে। ২০১৯ সাল। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

কাছাকাছি সময়ে ওই দেয়াল দুটিতেই আঁকা হয়েছিল 'সহমত ভাই' ও 'হেলমেট ভাই' নামের দুটি আলাদা গ্রাফিতি। দর্শনার্থীরা 'সহমত ভাই'কে সংযুক্ত করেছিলেন সমাজে বিদ্যমান তোষামোদির চর্চার সঙ্গে। আর 'হেলমেট ভাই' সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন ছিল, এরা তোষামোদি চর্চাকারীদের পক্ষে কাজ করা পীড়নকারীদের দল।

পরের বছর ২০১৯ সালে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দেয়ালে দেয়ালে আঁকা প্রতিবাদী চিত্রে ফুটে ওঠে নির্যাতনে নিহত ও গুরুতর আহত সব শিক্ষার্থীর মুখ। তখন আবু বকর, এহসান রফিক, হাফিজুর মোল্লা ও আবরার ফাহাদের মুখচ্ছবি মনে করিয়ে দেয় ছাত্ররাজনীতির নামে চলা নির্যাতন–নিপীড়নের নৃশংস সব ঘটনা।

উচ্চশিক্ষা নিতে এসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে এমন নিপীড়নের ঘটনা এখনো চলমান। এসব দেখেও চোখ বুজে থাকেন ক্ষমতার তল্পিবাহক অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা। সমর্থন দিয়ে যান অন্যায়কে।

এখানেও তো প্রশ্ন উঠতে পারে- বিবেক কোথায়?

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

12h ago