৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অডিও ফাঁস, চারঘাট থানার ওসি প্রত্যাহার

মাহবুবুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে তাকে প্রত্যাহারের পর জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

আজ রোববার অতিরিক্ত এসপি মো. রফিকুল আলম জানান, রাজশাহীর এসপি মো. সাইফুর রহমানের কাছে এক নারী অভিযোগ দায়ের করার পর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ওসির প্রত্যাহারের আদেশ জারি করা হয়।

গতকাল রাতেই ওসির ঘুষ দাবির একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

অতিরিক্ত এসপি বলেন, 'আমরা প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগগুলো সত্য এবং অডিও ক্লিপে ওসির কণ্ঠস্বর সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।'

পুলিশ ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সাহারা বেগম (২৭) নামের ওই নারী গতকাল শনিবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, ওসি মাহবুবুল আলম তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং দিতে ব্যর্থ হলে তাকে মাদক মামলায় জড়ানো হবে বলে হুমকি দেন।

অভিযোগে বলা হয়, আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবত পুলিশ ও র‍্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করে। চারঘাট এলাকায় তার সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক ব্যবসাীকে পুলিশ-র‍্যাব আটক করেছে। এতে এলাকার শীর্ষ মাদক সম্রাটদের সাথে শত্রুতা চরম হয়। মিথ্যা মামলায় আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে আছে।

'গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে চারঘাট থানায় মুক্তা, সাব্বির ও শুভর (মাদক চোরাকারবারী) বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে গেলে ওসি অভিযোগ না নিয়ে তার ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে যায় আমাদের। এসময় ওসি মাহবুবুল তার কোয়ার্টারে তার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে মুক্তা, সাব্বির ও শুভ এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়া যাবে না। এদের আমি নিজেই মাদক ব্যবসা করাচ্ছি। এদের গ্রেপ্তার করাও যাবে না। তুমি যদি ২ লাখ টাকা দিতে পারো তাহলে ওদের অস্ত্র বা মাদক দিয়ে মামলা দেবো। এসময় তিনি হুমকি দিয়ে বলেন নির্বাচনের উদ্দেশ্যেই এখানে আমাকে আনা হয়েছে। আমার থানা চালাতে বহু খরচ। এসপি স্যারকে টাকা দিতে হবে ৫ লাখ। ৭ লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনে দিতে হবে জায়গা মতো। তোমার স্বামী জেলে তুমি ব্যবসা করো সমস্যা নাই।'

অভিযোগে আরও বলা হয়, এসময় ডিবি ওসি চারঘাট থানা এলাকায় মাদকসহ ব্যবসায়ীদের আটক করার কারণে তাকে বদলি করতে ২ লাখ টাকা দাবি করেন ওসি মাহবুবুল।

ওসির সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড করে রাখেন বলে জানান অভিযোগকারী।

প্রায় ৭ মিনিটের অডিওর শুরুতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, 'তোমাদের মোবাইল টোবাইল সব বন্ধ করো। সব ওপেন করে এখানে রাখো। ...এক মন্ত্রী বাদে কারো কথা শুনতে এখানে আসি নাই। এক মন্ত্রী যদি বলে সে লোকটা রাষ্ট্র, রাষ্ট্রকে সম্মান করি। মন্ত্রী মানেই রাষ্ট্র। আর মন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে নিয়ে আসছে সে। আমাকে গাইবান্ধা থেকে নিয়ে আসছে।'

অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, 'অ্যারেস্ট মাপ হবে না। আপনার স্বামী আমার ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে। শোনো টাকা ৫ লাখ কালকে নিয়ে আসবা। বহুত ফাঁকি দিছো। আলিমের সাথে দেখা কইরা এই যে এতদিন ফাঁকি দিছ, চুরি কইরা করে চোরাগুপ্তা হবে। এখনও কিন্তু তোমার গায়ে আচড় দেই নাই, দেই নাই কিন্তু। আচ্ছা শোনো এখন সেরকম ঝামেলা করো না, সবাই পয়সা খাচ্ছে। ওই পয়সা যদি দিতে পারো তাইলে বলো নাইলে আপাতত থানা থেকে ইয়ে করো এখন কিন্তু আর ওইরম সময় নাই যে পয়সা খাচ্ছে না। এখন সবাই অল জেলা, এখানে মাসিক অনেক টাকা লাগতেছে। আমি তো কথা দিয়ে আসছি। ঠিক আছে আমার হলো কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার, কারণ কী কী জিনিস চাইছে, ৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলছি স্যার আমি চেষ্টা করব। এবং বলছি যে এখানে মাদক ছাড়া কিছু নাই। ওপেন। তখন আর কথা কয় না। হ্যাঁও কয় না নাও কয় না।'

এসময় তিনি বলেন, তোমরা কি আমার ৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে পারবা? ধইরা ওদের আবার চালান দিয়ে দিবা। যা হয় হবে। থাকি বা না থাকি ওরে সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা করবা।'

তিনি বলেন, 'যদি আতিকের বদলি চান তাহলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। আগামী কালকে। দুই জায়গা থেকে ৭ লাখ টাকা।'

এ বিষয়ে ওসি মাহবুবুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

3h ago