ম্রো জনগোষ্ঠীর দুর্লভ ছবি বই ‘মাংসি’ নিয়ে আলোচনা

‘মাংসি’তে প্রায় তিন যুগ আগেকার ম্রোদের জীবনযাপন ও বান্দরবানের নিসর্গ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
ম্রো জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শিল্পী-আলোকচিত্রী মইনুল আলমের ছবি বই ‘মাংসি’ হাতে আলোচকরা। ছবি: স্টার

বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শিল্পী-আলোকচিত্রী মইনুল আলমের ছবি বই 'মাংসি' নিয়ে চট্টগ্রামের খুলশীর চিত্রভাষা গ্যালারিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা অনুষ্ঠান।

আলোচক ছিলেন আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ, লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ এবং ম্রো ভাষার প্রথম লেখক ইয়াংঙান ম্রো।

যেকোনো উৎসবের আগে ম্রো সমাজের ছেলে-মেয়েরা কাপড়ে রাংসি (লাল রঙ) ও মাংসি (সবুজ রঙ) লাগায়। এই ম্রো শব্দ 'মাংসি'কেই বইয়ের নাম হিসেবে ধার করেছেন মইনুল আলম। 

বইটি সৃজনশীল প্রকাশনী 'পূর্বস্বর' থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ২৩২ পৃষ্ঠার এই বইয়ে স্থান পেয়েছে ২১০টি দুর্লভ আলোকচিত্র। 

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে আলোকচিত্র জগতে আবির্ভাব ঘটে মইনুল আলমের। ৩৫ মিমি ফিল্মের নিকন এফ৩এক্স মডেলের একটি ক্যামেরার মাধ্যমে যাত্রা শুরু। সমাজের প্রান্তিক জনজীবন শিল্পী মইনুল আলমকে আকৃষ্ট করেছে তখন থেকেই।
 
'মাংসি'তে প্রায় তিন যুগ আগেকার ম্রোদের জীবনযাপন ও বান্দরবানের নিসর্গ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ছবিগুলো রঙ-বিন্যাসে যেমন চিত্তাকর্ষক, ধারণকৌশলে তেমনি বাঙময়। 

দুই শতাধিক রঙিন আলোকচিত্রে শোভিত মাংসি-তে ম্রোদের নিত্যদিনের জীবনচর্যা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজগোজ, দূরের পথে দল বেঁধে পায়ে হেঁটে বা নৌকায় হাটে যাওয়া, মাতামুহুরি নদী তীরে সামান্য ভাত-মাছ রান্না করে খাওয়া-দাওয়া, ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতি, উৎসব-নানা শ্রেণি ও বিষয়ের ছবি ধারাবাহিকভাবে পরিস্ফুট হয়েছে পাতায় পাতায়।
 
'মাংসি' বইটির ছবি ও পেছনের গল্পকে ভিত্তি করে ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
 
এসময় ইয়াংঙান ম্রো বলেন, 'মইনুল আলমের বই মাংসির মাধ্যমে আমি আমার শৈশবে ফিরে যাই। মাংসি বইটির মাধ্যমে ম্রো ছেলে-মেয়েরা তাদের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে আদি-তথ্য পাবেন, যা হয়তো তারা জানতেনই না। বইতে এমন সব গল্প আছে, যা এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের ভাষা পড়ার-জানার যে গুরুত্ব তা হয়তো এখন ম্রো-রা বুঝতে পারবেন।'
 
আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ বলেন, 'আমাদের এখন তিনটি জেনারেশন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যারা ভিন্নভাবে তাদের গল্প বলবে। আলোকচিত্র ভীষণভাবে শক্তিশালী, এটি আমাদের সমগ্র পরিস্থিতির ডকুমেন্টেশন করে। মাংসি এমনই একটি বই যার মূল্য হয়তো এখন আমরা দিতে পারব না, কিন্তু দীর্ঘ সময় পর গিয়ে এ বইটি নিয়ে গবেষণা হবে। মাংসি-র পেছনে মইনুল আলমের ২৭ বছরের যে পরিশ্রম তা আসলেই বিশাল।'

লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, 'মানুষের গল্প বলার ক্ষমতাই তাকে আলাদা করে তোলে। আলোকচিত্রীদের এই ক্ষমতা প্রবল। মইনুল আলম তার মাংসি বইয়ের মাধ্যমে আমাদের সেই গল্পই দারুণভাবে বলেছেন। বইটি যতটা স্বচ্ছ, ততটাই পলিটিক্যাল। বইতে দেখতে পাই যে সিনচো (ম্রোদের বাঁশি) ছবি আছে তা এখন বিলুপ্তপ্রায়।'

Comments