চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রথম পরিদর্শন ট্রেন, মানুষের উচ্ছ্বাস

আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে যাত্রীবিহীন পরিদর্শন ট্রেনটি দুপুর ১২টায় চন্দনাইশের দোহাজারী পৌছায়। ট্রেনটি দেখতে রেললাইনের দুই পাশে ভিড় জমান সববয়সী মানুষজন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নারী-শিশুরা।
ট্রেনে ফুল ছিটিয়ে এলাকার মানুষের উচ্ছ্বাস। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো পরিদর্শন ট্রেন চলাচল উচ্ছ্বাস এনে দিয়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মনে।

আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য এই ট্রেন চালানো হয়। আজ রোববার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আটটি বগি নিয়ে এই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

দেশের কোথাও নতুন রেললাইন নির্মিত হলে রেলওয়ের পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রথমে তা পরীক্ষা করে দেখে। অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলে নতুন রেলপথটি ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়। এরপর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) ও আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

আজ যাত্রীবিহীন পরিদর্শন ট্রেনটি দুপুর ১২টায় চন্দনাইশের দোহাজারী পৌছায়। ট্রেনটি দেখতে রেললাইনের দুই পাশে ভিড় জমান সববয়সী মানুষজন। অনেকেই মুহূর্তটি মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন নারী-শিশুরা।

পরে লোহাগড়া উপজেলার ক্যামিলিয়া নগর এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনটি ১০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়। তখন ট্রেনে থাকা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা লাইন পরীক্ষা করেন।

এসময় নতুন রেললাইন দিয়ে ট্রেন যাওয়ার দৃশ্য দেখতে এসেছিলেন ৫০ বছর বয়সী কল্পনা বড়ুয়া। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'এই নতুন রেললাইন এই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করবে। কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও ঢাকাতে সহজে যাতায়াত করতে পারব।'

ট্রাকচালক ইসমাইল বলেন, 'এই রেললাইনের তৈরির জন্য আমরা অনেক ফসলি জমি হারিয়েছি। তারপরও এলাকার উন্নয়ন হবে ভেবে সান্ত্বনা খুঁজেছি। আজ আমাদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হলো।'

পরিদর্শন ট্রেনের চালক মাহফুজুর রহমানের ভাষ্য, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ দেন তিনি। এরপর দেশের প্রায় সব রেলপথে তিনি যাতায়াত করেছেন। কিন্তু এমন উচ্ছ্বাস আগে কোথাও দেখেননি তিনি।

চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রা করা ট্রেনটিতে ছিলেন রেল পরিদর্শক রহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ।

ট্রেন ছাড়ার আগে চট্টগ্রাম স্টেশন প্ল্যাটফর্মে নাজমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন এ রেলপথটি পরিদর্শন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা দেখবেন কাজ ঠিকমতো হয়েছে কিনা এবং তা ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ কিনা। এটা রেলওয়ের রুটিন ওয়ার্ক। এটা কোনো ট্রায়াল রান না। এটা পরিদর্শন ট্রেন।

২০১৮ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে।

১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেললাইনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন উপলক্ষে কক্সবাজারে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৮ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।

Comments