গার্মেন্টসে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবে বেড়েছে ২৫-২৯ শতাংশ, ৫৬ শতাংশ নয়: টিআইবি

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, বাস্তবে বেড়েছে ২৫-২৮.৮৮ শতাংশ। এর আগের মজুরি কাঠামোতে উল্লেখ থাকা বাৎসরিক ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির এই চিত্র তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিষয়টি উল্লেখ করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবি বলেছে, নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠি ও বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে বাৎসরিক ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি। তৈরি পোশাক রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মজুরি সবচেয়ে কম। নতুন ঘোষিত কাঠামো অনুযায়ীও বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্নই থাকবে।

নিম্নতম মজুরি বোর্ডে পাঠানো চিঠিতে টিআইবি বলেছে, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত নিম্নতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসেবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি ন্যূনতম ৫২৩২.৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে ২৮.০৪ শতাংশ। গ্রেড চারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ২৬.৫২ শতাংশ। একইভাবে, গ্রেড তিন, দুই ও এক-এর ক্ষেত্রে মূল মজুরি প্রকৃত বৃদ্ধি পাবে ২৪.১৬ শতাংশ, ২৩.৯৭ শতাংশ এবং ২৪.৭১ শতাংশ।

প্রতিবছর মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০২৩ সালে এসে নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ন্যূনতম মোট মজুরি টাকা হওয়ার কথা ৯৬৯৯.১৩ টাকা। নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী এই গ্রেডে সর্বমোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১২৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশ সর্বমোট মজুরি বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃত বিচারে বেড়েছে মাত্র ২৮.৮৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক এর ক্ষেত্রে মোট মজুরি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে মাত্র ২৭.৫৯ শতাংশ, ২৫.৫৮ শতাংশ, ২৫.৩৫ শতাংশ এবং ২৫.৯৩ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কম বলে বিশ্লেষণে দেখিয়েছে টিআইবি।

সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে পঞ্চম গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫৫৭২.২৬ টাকা, যেখানে নতুন প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬৭০০ টাকা।  অর্থাৎ, মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে বলা হলেও তা মূলত বাড়ছে ২০.২৪ শতাংশ।  একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক- এ মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮.৮১ শতাংশ, ১৬.৫৯ শতাংশ, ১৬.৪১ শতাংশ এবং ১৭.১১ শতাংশ। সর্বমোট মজুরির হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে একজন শ্রমিকের ৯৯১৩.৫০ টাকা পাওয়ার কথা। সর্বমোট মজুরি এই গ্রেডে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৫০০ টাকা করা হয়েছে বলা হলেও, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে সর্বমোট মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ২৬.০৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক-এ প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ২৪.৮০ শতাংশ, ২২.৮০ শতাংশ, ২২.৫৫ শতাংশ এবং ২৩.১০ শতাংশ।

এমন সব বাস্তবতায় শ্রমিকদের মজুরি ৫৩-৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে- এমন হিসাবকে 'শুভঙ্করের ফাঁকি' উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের নতুন প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক মজুরি না দেওয়াটা সত্যিই লজ্জাজনক।'

Comments

The Daily Star  | English

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

10h ago