মেট্রোরেলের গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি রুট: প্রকল্প অর্থায়নে সবুজ সংকেত

রুটটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, তেজগাঁও ও আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দিতে শেষ হবে।

ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৫ এর দক্ষিণ রুট নির্মাণে অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় ঢাকায় আরেকটি বড় মেট্রোরেল রুট চালু হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

এই কাজের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৩ বিলিয়ন ডলার এবং দক্ষিণ কোরিয়া ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের বাজেট ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার পশ্চিমের গাবতলী এবং পূর্বের দাশেরকান্দির মধ্যকার ১৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার দূরত্বে মেট্রোরেল পরিষেবা চালু হবে। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই রুটের ১৩ কিলোমিটারের বেশি অংশ হবে ভূগর্ভস্থ এবং ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড।

প্রকল্পে অর্থায়নের নিশ্চয়তা দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ গত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি প্রথমে প্রস্তাবটি পরীক্ষা করবে এবং তারপর এটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উত্থাপন হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে এডিবির একটি উচ্চপর্যায়ের দল অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জন্য এডিবির অর্থায়নের পরিকল্পনায় রয়েছে।

এডিবির এই ঋণের মেয়াদ হবে ৩০ বছর, যার মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড।

দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৩-২০২৭ সালের মধ্যে সহজ শর্তে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত বছরের মে মাসে একটি 'ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট' সই করেছে। এই ঋণের মধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলার আসবে এমআরটি লাইন-৫ এর দক্ষিণ রুটের জন্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছর মেয়াদী এই ঋণের সুদের হার শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন—এমআরটি লাইন-৬—গত ২২ জানুয়ারি চালু হয়েছে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই রুট হলেও মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়া এই মেট্রোরেল ঢাকার ভেতরে চলাচলের সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে উত্তরা ও মতিঝিলের মধ্যে সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে।

এমআরটি-৫ দক্ষিণ রুট

এমআরটি লাইন-৫ এর দক্ষিণ রুটটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, তেজগাঁও ও আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দিতে শেষ হবে। এর মোট স্টেশন থাকবে ১৫টি, যার মধ্যে ১১টি ভূগর্ভস্থ এবং ৪টি এলিভেটেড স্টেশন।

প্রকল্পের নথি অনুসারে, প্রকল্পের গাবতলী থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত অংশ হবে ভূগর্ভস্থ এবং আফতাবনগর থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত অংশ হবে এলিভেটেড।

এই রুটে প্রাথমিকভাবে ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ বিশিষ্ট ১৯টি মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে।

নথি অনুসারে, প্রতিটি মেট্রোরেল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

এই রুটে মেট্রোরেল চালু হলে গাবতলী ও দাশেরকান্দির মধ্যে চলাচলে সময় লাগবে মাত্র ২৮ মিনিট। ২০৩০ সালে এই রুট চালু হওয়ার পর প্রতি সাড়ে ৪ মিনিট পর পর ট্রেন ছেড়ে যাবে।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছয়টি লাইনের সমন্বয়ে ১৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে।

এই পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন হলে অন্তত ৫০ লাখ মানুষ এই পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবে।

Comments