অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট গড়ে তুলুন: ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি

তিনি বলেন, পুরো ফুড বিজনেসটা ৫-৬টা করপোরেট গ্রুপের হাতে চলে গেছে। তারা চাইলেই দেশে ক্রাইসিস তৈরি করতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ছবি: স্টার

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা সিন্ডিকেট গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। 

তিনি বলেছেন, 'প্রসাধনী থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যেটি বাংলাদেশে নকল হয় না। এমনকি হার্টের রিং-বাল্ব পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ বিক্রি হচ্ছে। দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় এই কাজগুলো করা হচ্ছে। অথচ সততার সঙ্গে যিনি ব্যবসা করতে চান তিনি টিকে থাকতে পারেন না।'

'ভোজ্যতেল ক্রয়—বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার বন্ধে' আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'এগুলো বন্ধের জন্য বিভিন্ন আইন আছে, সরকারি দপ্তর আছে, প্রশাসন আছে। কিন্তু প্রতিটি পদে পদে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। জনমত তৈরি করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তার সিন্ডিকেট দরকার।'

ডেঙ্গুর প্রকোপে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মশার কয়েলও নকল করা হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে পাওয়া গেল, প্রতিষ্ঠিত একটি ব্র্যান্ডের চিনি, লবণ নকল প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো অহরহ হচ্ছে, এইটা হচ্ছে বাস্তবতা।'

বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সংগ্রাম করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিগত ১৫ বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অনেকে বলেন, দেশটা নাকি সিঙ্গাপুরের মতো। আমি বলছি, না, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের মতো হয়েছে। আমাদের দেশের মেট্রোরেল সিঙ্গাপুরের চেয়েও বেটার (উন্নতমানের)। আমরা সাবমেরিন, স্পেস ও নিউক্লিয়ার ক্লাবে ঢুকেছি। এই অর্জনগুলো ইচ্ছা করলেই করা যায় না। এইগুলোর জন্য একটা পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট দরকার। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের টার্গেট দিয়েছিলেন। তার যেই ভিশন তাতে আমরা আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হবো।'

'২০২৬ সালের পর মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় যাবো। তখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যেসব সুবিধা পাচ্ছি তা কমে যাবে। তখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা যাবে। তখন কর্মক্ষম মানুষের প্রয়োজন হবে। কিন্তু খোলা ড্রামের অনিরাপদ তেল খেলে তো সেই কর্মক্ষম মানুষ পাব না। কেমিক্যালের ড্রাম পরিষ্কার না করেই সেখানে ভোজ্যতেল মজুত করে বিক্রি করছে', যোগ করেন তিনি।

দেশে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আমরা ১৫০০ মানুষকে হার্টের চিকিৎসা দিতে পারি। কিন্তু প্রতিদিন ঢাকা সিটিতে হার্টের রোগী আসে ৫-১০ হাজার। এর কারণ হিসেবে ধূমপান ছাড়াও এই অনিরাপদ তেল ব্যবহারও অন্যতম কারণ। আমার তো মনে হয়, সবচেয়ে বেশি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ এই বাংলাদেশে বিক্রি হয়। কেউ গবেষণা করলে এমনটাই পাওয়া যাবে।'

বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করা ব্যবসায়ীর কথা উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, 'খলিল যখন মাংসের দাম ৫৯৫ টাকায় বিক্রি শুরু করল, তখন মাংসের দাম ৮০০ থেকে নেমে ৬৫০ হয়ে গেল। তখন খলিলকে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়। মাংসে তো খলিল বিপ্লব ঘটিয়েছে, তাকে আমরা প্রশংসিত করেছি। কিন্তু তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর কম দামে মাংস বিক্রি করায় রাজশাহীতে খুনও করা হয়েছে। এই বাস্তবতায় আমরা আছি।'

'খাদ্যপণ্যের ব্যবসা ৫-৬টি করপোরেট গ্রুপের হাতে চলে গেছে, যারা চাইলেও দেশে খাদ্যপণ্যে সংকট তৈরি করতে পারে,' বলেন তিনি।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, 'সয়াবিন আর পাম তেলের দামের পার্থক্য ২০ টাকা। শীতকালে এই দুইটার পার্থক্য বোঝা যায়, তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রীষ্মে সয়াবিন বলে পাম তেল বিক্রি করে। এই চক্র খুবই শক্তিশালী। সত্যিকার অর্থে পুরো ফুড বিজনেসটা ৫-৬টা করপোরেট গ্রুপের হাতে চলে গেছে। তারা চাইলেই দেশে ক্রাইসিস তৈরি করতে পারে। চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। কারণ এখন চাল, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির ওপর তাদের হাত পড়েছে। সামনের দিকে ভয়াবহ অবস্থা আসছে।'

আগামী ১ মার্চ থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারাদেশে খোলা তেল বিক্রি বন্ধে অভিযানে নামবে বলে জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী। নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ভবনে এই কর্মশালায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago