ভারত-নেপাল-ভুটানগামী যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেবে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’

‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’র কল্যাণে স্থলবন্দরটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং স্থলবন্দরটিতে বিদেশগামী যাত্রী ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ভিড় বাড়বে।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস
উদ্বোধনের অপেক্ষায় ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

আশা করা হচ্ছে—দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বুড়িমারী স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে কয়েক শ যাত্রী চলাচল করেন। এখানে প্রতিদিন শতাধিক আমদানি ও রপ্তানিকারকরা আসেন দেশের নানা স্থান থেকে।

'বুড়িমারী এক্সপ্রেস'র কল্যাণে স্থলবন্দরটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং স্থলবন্দরটিতে বিদেশগামী যাত্রী ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ভিড় বাড়বে।

এ কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন লালমনিরহাট-১ আসনের (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) সংসদ সদস্য ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন।

বহুল প্রত্যাশিত ও প্রতীক্ষিত এই ট্রেনটি অবশেষে আগামীকাল মঙ্গলবার চালু হতে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের আশা, 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' ভারত-নেপাল-ভুটানগামী যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেবে। এ ছাড়াও, আন্তর্জাতিক ব্যাবসায়ীরাও পাবেন নির্বিঘ্ন চলাচলের সুযোগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর স্টেশন থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকা চলাচল করবে। তবে আপাতত এটি চলবে লালমনিরহাট স্টেশন থেকে। বুড়িমারী স্টেশন থেকে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে এই ট্রেনের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হবে।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, 'বুড়িমারী-ঢাকা রুটের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। দেশের সবচেয়ে দৈর্ঘ্য রেলরুট এটি। লালমনিরহাট থেকে ঢাকার রেলরুটে দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার। শিডিউল ঠিক রাখতে আপাতত ট্রেনটি লালমনিরহাট থেকে চলাচল করবে।'

'বুড়িমারীকে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'চলতি বছরই ট্রেনটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে সরাসরি ঢাকা চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।'

'রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ট্রেনটি চালু করা হবে। যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইতোপূর্বে ট্রেনটি চালু করতে পাঁচবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর, ৬ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি ও ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ট্রেনটি চালুর তারিখ। অবশেষে ১২ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হলো।

২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ও তিনবিঘা করিডোর পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকা চলাচলের জন্য আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন।

২০১৮ সালের ১৬ জুন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এসেছিলেন লালমনিরহাট স্টেশনে। সেসময় তিনি বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।'

২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, 'বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুত চালু করা হবে। কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।'

বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবশেষে বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেস চালু হতে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে চলাচলের কথা থাকলেও আপাতত তা হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।'

'বুড়িমারী, বড়খাতা, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও তুষভান্ডার বুড়িমারী স্টেশন থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের অনেকে টিকেট কিনেছেন। তাদেরকে বুড়িমারী এক্সপ্রেসে চড়তে শাটল ট্রেনে লালমনিরহাট স্টেশন আসতে হবে।'

তিনি ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী স্টেশন থেকে চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার আব্দুস সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকাল মঙ্গলবার বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হচ্ছে। বর্তমানে ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে চলাচল করলেও পরে তা হবে বুড়িমারী স্টেশন থেকেই চলবে।'

Comments