এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা যেন শেষ হয় না

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুর-আজিমপুর রুটে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহন ও আশুলিয়া-আজিমপুর রুটের বিকাশ পরিবহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার শুরু করলে বিআরটিসির যাত্রী কমে আসে।
কাওলায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পের কাছে বিআরটিসি কাউন্টার থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বাস। ছবি: স্টার

রোববার সকাল সাড়ে ৯টা। বিমানবন্দরের কাওলায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পের কাছে বিআরটিসি কাউন্টারে বাসের জন্য অপেক্ষায় ফার্মগেটগামী জনাদশেক যাত্রী। টিকিট বিক্রেতা জানালেন, বাস চলে আসবে ১০ মিনিটের মধ্যেই।

কিন্তু সেই বাসের দেখা মিলল আধঘণ্টারও বেশি সময় পর। এই সময়ের ভেতর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়েই একটি বেসরকারি কোম্পানির যাত্রীভর্তি পাঁচটি বাস একের পর এক ট্রিপ নিয়ে চলে গেল সবার চোখের সামনে দিয়ে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল নগর পরিবহন ব্যবহারকারী সাধারণ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে বিআরটিসির বাস পরিচালনা শুরু করে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।

খেজুরবাগান থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে দ্বিতল বিআরটিসি বাস থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি: স্টার

প্রাথমিক অবস্থায় আটটি দ্বিতল বাস দিয়ে এই সেবা চালু হলেও বর্তমানে এই রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ১২। কিন্তু এক ট্রিপ থেকে আরেক ট্রিপের মধ্যে লম্বা বিরতির কারণে সরকারি পরিবহন সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না এই পথে চলাচলকারী নিয়মিত যাত্রীরা। তাই গাদাগাদি করে হলেও তারা বেসরকারি কোম্পানির বাসেই যাতায়াত করছেন।

এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বিআরটিসির এই বাসসেবা অনেকটা 'শাটল' সার্ভিসের মতো। বিআরটিসির বাসগুলো কেবল উড়ালসড়ক কেন্দ্র করেই চলে। খেজুরবাগানের কাছ থেকে বাসগুলো ছাড়ে। এরপর উড়ালসড়ক দিয়ে উত্তরা জসীমউদ্‌দীন রোড হয়ে খেজুরবাগান এলাকায় ফিরে আসে। বাস চলাচল শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে।

সকালে কাওলা থেকে বিআরটিসির বাসের যাত্রী হয়ে ওঠা মোজাফফর হোসেন বললেন, এই পথে উত্তরা এলাকার প্রচুর মানুষ চলাচল করেন। তাই জসীমউদ্‌দীন রোডের বদলে আব্দুল্লাহপুর কিংবা হাউস বিল্ডিং এলাকা থেকে বাস ছাড়লে যাত্রীদের হয়রানি কম হতো। পাশাপাশি প্রচুর যাত্রীও পাওয়া যেত।

একই বাসের যাত্রী কামরুল ইসলামের ভাষ্য, এই পথের বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্য ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ কিংবা মতিঝিল। তাই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলকারী বিআরটিসির বাস ধরতে আগ্রহী যাত্রীদের পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় খেজুরবাগান আসতে হয়। এটাও একটা সমস্যা তৈরি করে।

গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এই দ্রুতগতির উড়ালসড়ক যান চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে যানজট আর সিগন্যালমুক্ত এ সড়কে ছিল প্রাইভেটকারের রাজত্ব। পরে এই পথে বাস চলাচল শুরু হলে তা অনেক সাধারণ যাত্রীর জন্য স্বস্তি বয়ে আনে।

খেজুরবাগান থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে দ্বিতল বিআরটিসি বাস থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি: স্টার

খেজুরবাগান থেকে যাত্রা করলে খামারবাড়ি ও বিজয় সরণি সিগন্যাল পার হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে ১৭ কিলোমিটার পথ পার হয়ে জসীমউদ্‌দীন অ্যাভিনিউ পৌঁছাতে বিআরটিসি বাসের সময় লাগে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের মতো। অন্যদিকে জসীমউদ্‌দীন অ্যাভিনিউ, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ও কাওলা থেকে দক্ষিণমুখী যাত্রায় সময় লাগে খানিকটা কম। সেখানে দুদিক থেকেই নিচের যানজটের রাস্তা দিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে অন্তত ঘণ্টা দেড়েক সময় লেগে যায়।

এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বিআরটিসির বাস চালু হওয়ার পর সুযোগ থাকলেও অনেকদিন বেসরকারি কোম্পানিগুলো 'যাত্রী পাওয়া যাবে না' ভেবে যানজট ঠেলে নিচের সড়ক দিয়েই চলছিল।

কিন্তু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজীপুর-আজিমপুর রুটে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহন ও আশুলিয়া-আজিমপুর রুটের বিকাশ পরিবহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার শুরু করলে বিআরটিসির যাত্রী কমে আসে।

ভিআইপি পরিবহনের একজন সুপারভাইজার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর আমাদের গাড়ি ছাড়ে। তাই অনেকে বিআরটিসির বাসের জন্য অপেক্ষা করতে চান না।'

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমাদের বাসগুলো ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর ছাড়ে। কিন্তু সবগুলো দ্বিতল বাস হওয়ায় অন্য পরিবহনের বাসগুলোর তুলনায় গতিতে খানিকটা পিছিয়ে পড়ে।'

এই সমস্যা সমাধানের জন্য এই রুটে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'শুরুতে যাত্রীর অভাব ছিল না। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অন্য কোম্পানির বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর বিআরটিসির যাত্রী কমেছে।'

'এ জন্য বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রুটটি খেজুরবাগান থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। দ্রুত তা কার্যকর হবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago