‘মুক্তিপণ দেওয়ার এক ঘণ্টা পর’ ছাড়া পান ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন

নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধারের পর বান্দরবানে র‌্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ছবি: স্টার

বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীন 'মুক্তিপণের বিনিময়ে' মুক্তি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একাধিক সূত্র। 

তবে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা র‍্যাব সদস্য এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু বলা হয়নি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা বাজারের বেথেলপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয় নেজাম উদ্দীনকে। 

বান্দরবানের র‍্যাব-১৫ এর একটি দল থাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাত ৯টার দিকে বান্দরবান সদরে র‍্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার রাতে নেজাম উদ্দীনকে অপহরণের পর বুধবার তার পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলে শোনা গিয়েছিল। 

মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন রুমা উপজেলার ইউএনও দিদারুল আলম ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মাহফুজুর রহমান।

তারা দুজনেই দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি তারা শুনেছেন। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে। তবে ফোনটি কারা করেছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নেজামের স্ত্রী মুক্তিপণের ফোনের বিষয়টি স্বীকার করলেও, পরে অবশ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বুধবার রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল। তবে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাকে দিতে পারেনি। কথা বলে মনে হয়েছে ফেইক। কেউ হয়ত প্রতারণার জন্য ফোন দিয়েছিল।' 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বলেছিল, নম্বরটি 'ভুয়া'।

কিন্তু, বৃহস্পতিবার নেজামকে উদ্ধারের পর মুক্তিপণের বিষয়টি আবার সামনে আসে।

পুলিশের একাধিক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে যে, মুক্তিপণের বিনিময়েই নেজামকে ছেড়েছে অপহরণকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় সন্ত্রাসীদের হাতে। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে বাজারের পাশে পাওয়া যায়। মুক্তিপণ নিয়ে দেন দরবার করেছেন পরিবারের সদস্যরা। অক্ষতভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে আশ্বাস দেওয়ার পরই টাকা দেওয়া হয়।'

পুলিশের একটি ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নেজামের ভাই পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান তার ভাইকে উদ্ধারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনিই নেগোসিয়েশন করেছেন অপহরণকারীদের সঙ্গে।'

এসআই মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি থানায় কর্মরত। ভাইয়ের অপহরণের খবর পেয়ে তিনি সেখান থেকে বান্দরবান চলে আসেন।

মুক্তিপণের ফোনের বিষয়টি মিজানুর রহমান স্বীকার করলেও, মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আমার ভাইকে অক্ষত পেয়েছি এতেই আমি ও আমার পরিবার খুশি। তাকে বাজারের পাশে পাওয়া গেছে। তিনি ভালো আছেন। তবে আমরা কোনো মুক্তিপণ দেইনি।'

'এ বিষয়ে র‍্যাবের সিনিয়ররা ভালো বলতে পারবেন। তারাই আমার ভাইকে উদ্ধার করেছেন। আমার ভাই বর্তমানে তাদের হেফাজতে আছেন,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে র‍্যাব-১৫ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা গত দুইদিন ধরে অপহরণকারীদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করেছি। ফাইনালি আজ তাকে আমরা উদ্ধার করতে সমর্থ হই।'

মুক্তিপণের বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গণমাধ্যমে কথা না বলার নির্দেশনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

বান্দরবান সদরে র‍্যাবের হেফাজতে থাকা ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নেজাম সুস্থ আছেন এবং আগামীকাল তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন।

কোনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে এমডি আফজাল বলেন, 'সার্বিক প্রচেষ্টায় এবং সবার সহযোগিতার মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। মুক্তিপণের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।'

মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনকে ফোন দেওয়া হলেও, তিনি রিসিভ করেননি।

গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে রুমায় উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে হামলা চালিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে অস্ত্র ও টাকা লুট করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে।

দুই দিনের অভিযানের পর র‍্যাবের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রুমা বাজারের পাশের এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে তাকে বান্দরবান সদরের র‍্যাব কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

11h ago