বাংলাদেশ

‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অনেক বাইরে ছিল এমভি আবদুল্লাহ, তাই সশস্ত্র প্রহরী নেওয়া হয়নি’

‘সাধারণত সোমালি উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। আর জাহাজটি যাচ্ছিল উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিকেল মাইল দূর দিয়ে।’
আগ্রাবাদে সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: স্টার

ভারত মহাসাগরে গত মাসে সোমালি জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ঘোষিত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অনেক বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল বলে দাবি করেছেন জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ কারণেই জাহাজটিতে সশস্ত্র প্রহরী নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

সমঝোতা শেষে মুক্তিপণ পেয়ে জিম্মি হওয়ার ৩২ দিনের মাথায় আজ রোববার ভোরে জাহাজে থাকা প্রায় ৬৫ জন জলদস্যু একে একে নেমে বারটি স্পিড বোটে করে উপকূলের দিকে পালিয়ে যায়। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মুক্তি পেয়ে ২৩ নাবিক দুবাই বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা করে।

নাবিকদের মুক্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএম'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিমসহ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারোয়ার জাহান, শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও করিম উদ্দিন।

জাহাজটিতে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী না রাখার ব্যাখ্যায় উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, 'জাহাজটি জলদস্যুপ্রবণ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অনেক বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল। সাধারণত সোমালি উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। আর জাহাজটি যাচ্ছিল উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিকেল মাইল দূর দিয়ে।'

গত ৮-৯ বছর ধরে ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি উল্লেখ করে শাহরিয়ার জাহান আরও বলেন, 'এটা একরকম প্রচলিতই হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই এলাকায় অনেক যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান করত।'

শাহরিয়ার জাহানের ধারণা, সম্প্রতি গাল্ফ অব এডেন এলাকায় জাহাজগুলোতে হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে বিদেশি যুদ্ধ জাহাজগুলো ওই অঞ্চলে ব্যস্ত হয়ে পড়ার সুযোগটা হয়তো সোমালির জলদস্যুরা কাজে লাগিয়েছিল।

তারপরেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে এতটা দূরে থেকেও এমভি আবদুল্লাহ যে জলদস্যুদের আক্রমনের শিকার হবে সেটা তারা ভাবতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার জাহান।

এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন অধিদপ্তর ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় সব বাণিজ্যিক জাহাজে সশস্ত্র প্রহরী নেওয়া সহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানান কেএসআরএম'র এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই হওয়ার পর থেকেই কেএসআরএম বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জাহাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশপাশি জলদস্যুদের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে বলে জানান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল জাহাজসহ সব নাবিককে নিরাপদে সুস্থ অবস্থায় দ্রুত ফিরিয়ে আনা। এরমধ্যে একটি বিদেশি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযান চালিয়ে দস্যুমুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এই ধরনের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে আমরা তা সঙ্গেসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে অবগত করি। এবং নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এটি বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে জাহাজ ও এর নাবিকদের মুক্ত করতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে কথা বলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম। তিনি জানান, ছিনতাইয়ের পর জাহাজটিকে জলদস্যুরা অস্ত্রের মুখে সোমালি উপকূলের একেবারে কাছে নিয়ে  গিয়েছিল। ঘটনার নয় দিনের মাথায় জলদস্যুদের কমান্ডারের ইংরেজিভাষী একজন সহায়ক প্রথমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেদিন আমরা প্রথমেই দুই পক্ষের মধ্যে মূলত কে আলোচনাটা চালাবেন—তা ঠিক করে নেই।

মেহেরুল করিমের ভাষ্য, ২০১০ সালে যখন তাদের জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তখন তাদের এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জ্ঞান ছিল স্বল্প। তাই এবারের বিষয়টা ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, 'এবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটার পরপরই এ বিষয়ে অবশ্যকরণীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নিতে থাকি।

'গতবারের ঘটনায় অনভিজ্ঞতাসহ অন্য বিভিন্ন কারণে জাহান মনি মুক্ত করতে প্রায় ১০০ দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু এবার ৩১ দিনের মধ্যেই আমরা এমভি আবদুল্লাহ ও এর নাবিকদের মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছি।'

 

Comments