তীব্র রোদে সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় বাড়ছে ঝুঁকি, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন

স্থানীয়রা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে সড়ক সংস্কারের সময়। 
প্রচণ্ড রোদে রাস্তার পিচ গলে যানবাহনের চাকায় লেগে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের পিচ গলে যাওয়ায়, এসব সড়কে যান চলাচল করছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।

সরেজমিনে যশোর-নড়াইল সড়ক, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সড়কে যান চলাচলের সময় পিচ চাকায় লেগে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে।

যশোর-নড়াইল সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এই সড়ক সংস্কারের সময়। 

এ সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। 

সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যান চলাচলে ঝুঁকি চৈতি হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) গলে যাওয়া পিচের উপর বালি ও পাথরের কুচি দিলেও, সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় সেগুলো স্থায়ী হচ্ছে না। 

যশোর-নড়াইল মহাসড়কের নীলগঞ্জ, হামিদপুর, দায়তলা, ফতেপুর, তারাগঞ্জ এলাকায় সড়ক জুড়ে কালো পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। 

ট্রাকচালক আব্দুল আলিম পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে নড়াইল থেকে যশোর ফিরছিলেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাস্তা এত গরম হয়েছে যে পথে ট্রাক থামিয়ে টায়ারে পানি স্প্রে করতে হচ্ছে। ২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে হয়, কিন্তু এমনভাবে পিচ গলতে কখনো দেখিনি। এ অবস্থায় সড়কে ট্রাক চালালে দ্রুত টায়ার নষ্ট হবে এবং যখন তখন টায়ার ফেটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।' 

ইজিবাইক চালক আ. রহিম বলেন, 'সড়কের পাশে আগে বড় বড় মেহগনি গাছ ছিল, যেগুলো সড়কে ছায়া দিত। সেসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তাপদাহে এখন সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। আমাদের ছোট গাড়ি রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা হতে পারে যেকোনো সময়।' 

সওজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়ক-মহাসড়কের পিচ কালো হওয়ায় সূর্যের তাপ শোষণ করে বেশি। যেসব সড়কে যানবাহন চলাচলের চাপ আছে, সেখানে চাকার ঘর্ষণে তাপ বেড়ে পিচ গলে যাচ্ছে। 
সওজ জানায়, সাধারণত সড়ক-মহাসড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তার মান ৬০/৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পিচ গলে যাওয়ার কথা। 
কিন্তু, গত কয়েকদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০-৪১ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সওজ কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটা "টেকনিক্যাল সমস্যা"। পিচ গলা ঠেকাতে সড়কে বালি ও পাথরের কুচি দেওয়া হচ্ছে, যেন গলে যাওয়া পিচ পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে।' 

তিনি আরও বলেন, 'হালকা থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের কারণে সড়কের বিটুমিন গলে যাওয়ায়, সড়কের কাজের মান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।' 

Comments