নির্বাচনী সহিংসতায় জ্বলছে একটি গ্রাম, খবর পেয়েও যায়নি পুলিশ-ফায়ার সার্ভিস

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

আজ মঙ্গলবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পাড়া কচুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস না যাওয়ায় বিকেলেও বিভিন্ন বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। 

বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১২-১৫টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক বাড়ির আসবাবপত্র, ধান-চাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

পাড়া কচুয়া গ্রামে বাড়িঘরে হামলার পাশাপাশি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

সেইসঙ্গে গ্রামের প্রায় ৩০টি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, জরুরি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের। এ কারণে বিকেলেও খড়ের গাদা জ্বলছিল।

ভুক্তভোগী কাপাসি বেগম (৩৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে গ্রামের লোকজন ভোট দিতে যায়। সকাল ১০টার দিকে শতশত লোক হঠাৎ করে আমাদের পাড়ায় আক্রমণ করে। আমার বাড়ির সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। অনেক বাড়িঘর ভাঙচুর করে। প্রতিটি বাড়ির খড়ের পালায় আগুন দেয়। তার ৪টি গরু, ৮টি ছাগল ও গয়না লুট করে নিয়ে যায়।'

কেন এবং কারা এই হামলা করেছে জানতে চাইলে একাধিক ভুক্তভোগী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উপজেলা নির্বাচনে ওই গ্রামের বাসিন্দারা আনারস প্রতীকের প্রার্থী শাকিল আকন্দ বুলবুলের সমর্থক।

অনেক বাড়ির ভেতরেও আগুন দিয়ে আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

হামলাকারীরা মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল লতিফের সমর্থক।

তারা বলেন, 'আমরা আনারস প্রতীকের পক্ষে ভোট করছি, সে কারণে এই হামলা।'

গ্রামবাসীর অভিযোগ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জালাল উদ্দিন রুমি হামলার নেতৃত্ব দেন।

হামলাকারীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বারো টিকরী গ্রামের ১০ জন মোটরসাইকেল প্রার্থীর এজেন্ট সকালে শিবপুর ইউনিয়ন কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তাদের ওপর হামলা করে শিবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম শাহীনের লোকজন। এ খবর পেয়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন গিয়ে পাড়া কচুয়া গিয়ে হামলা করে।'

প্রতিপক্ষের হামলায় গ্রামের অনেক বাসিন্দার ঘরের ভেতরে তছনছ করা হয়েছে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তহিদুল ইসলাম শাহীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই। তবে রাজনৌতিক কোনো গন্ডগোলের জন্য এতগুলো মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেবে? আমার বাড়ি এমনভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে যে রাতে রান্না করার জন্য একমুঠ চাল নেই।'

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জালাল উদ্দিন রুমি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে আমাদের মোটরসাইকেলের দুই এজেন্টকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করা হয়ে। এ কারণে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে এই হামলা করতে পারে। তবে আমি সেখানে ছিলাম না।'

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, উপজেলার শোলাগাড়ি ঈদগাহ আলিম মাদ্রাসা দিয়ে অনেক আগে থেকে শাহীন ও রুমির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এই দ্বন্দ্বের জেরে আজকের হামলার ঘটনা হতে পারে। 

গ্রামের বেশ কিছু টিনের ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

জরুরি নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ কেন ঘটনাস্থলে যায়নি, জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলম শাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।'

জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে আমরা ওই গ্রামে গিয়েছিলাম কিন্তু গ্রামের ভেতর ঢুকতে পারিনি। কারণ রাজনৈতিক ঝামেলা চলছিল গ্রামবাসীর মধ্যে। কিন্তু কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী সেখানে যায়নি। ফলে আমরা ফেরত আসি।'

কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যায়নি জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে বিজিবি সেখানে গিয়েছিল কিন্তু গ্রামবাসীর বাধার মুখে ঢুকতে পারেনি। এই পর্যন্ত আমি জানি।'

Comments

The Daily Star  | English

Sada Pathor Looting: Admin officials, law enforcers involved

Some government officials  including members of law enforcement agencies were involved in the rampant looting of stones from Bholaganj’s Sada Pathor area, found a probe committee of the Sylhet district administration.

3h ago