ভারতই সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে, সমাধান তাদেরই দিতে হবে: আলী রীয়াজ

‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া হলেও, ভারতের লক্ষণ নেতিবাচক। এটা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো সিদ্ধান্ত নয়। কেন তারা বাস্তবতা মেনে নিতে পারছে না, সে প্রশ্ন ভারতকে করা দরকার।’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে 'স্বৈরাচার' শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সুযোগ এসেছে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের। রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর স্বৈরাচারী উপাদান যাতে কোনোভাবেই না থাকে, এ বিষয়ে এক হয়ে দাঁড়িয়েছে সবাই। দেশের এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স কেবল একমাস পেরোল। ইতোমধ্যে সংবিধানসহ আরও বেশকিছু বিষয় সংস্কারে কাজ শুরু করেছে তারা। দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় নিপীড়িত মানুষের প্রত্যাশা তাদের প্রতি অনেক।

এই গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, সংবিধান কেন পুনর্লিখন প্রয়োজন, এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়, গণমামলা-গণগ্রেপ্তারের সংস্কৃতি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ।

দ্য ডেইলি স্টার: সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আলী রীয়াজ: এই আন্দোলনটি আসলে অকস্মাৎ হয়নি। ছাত্রদের আন্দোলনে জনমানুষের অংশগ্রহণ এবং এটিকে গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরের পেছনে ইতিহাস আছে। গত ১৫ বছর ধরে স্বৈরশাসনের যে নিপীড়ন, বহু মানুষের প্রাণহানি, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা—এগুলো বড় ভূমিকা পালন করেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে ৩৬ দিনের ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংমিশ্রণই নির্ধারিত করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ভাগ্য।

কোটা সংস্কারে ছাত্রদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ প্রথমেই যুক্ত হননি। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি জনমানুষের সমর্থন ছিল। সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ-নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ থেকে। ছাত্রদের ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। আবু সাঈদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আন্দোলন রূপান্তরিত হয়েছে, এতে জনমানুষের সংযুক্তি ঘটছে। আন্দোলনে যারা নিহত বা আহত হয়েছেন, তারা সবাই শিক্ষার্থী নন, তাদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক আছে, সাধারণ মানুষ আছে, দিনমজুর আছে, দোকানের কর্মচারী আছে, মধ্যবিত্ত মানুষ আছে।

শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে তার ওপর নির্ভর করে দেশ পরিচালনা করছিল। তরুণ শিক্ষার্থীরা ভয় ভেঙে দিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। এই কাজ তারা ছাড়া আর কেউ করতে পারছিলেন না। ছাত্ররা যখন বলেছে সরকার স্বৈরাচার, হাসিনা স্বৈরাচারী, তখন মানুষ ভয়ের ওই আবহ থেকে বেরিয়ে এসেছে, লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে।

ডেইলি স্টার: স্বৈরাচারের পতনকে কেউ বলছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা, কেউ বলছে গণঅভ্যুত্থান, কেউ বলছে বিপ্লব। আপনি কোনটা বলবেন?

আলী রীয়াজ: এটি গণঅভ্যুত্থান, গণমানুষের অভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান এই কারণে যে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরাচারকে হটানো হয়েছে। আর বিপ্লব বলব না এ কারণে যে বিপ্লবের পর নেতৃত্বদানকারীরা সরকার গঠন করে। এক্ষেত্রে তা হয়নি।

এটাকে আমি দ্বিতীয় স্বাধীনতাও বলব না। কারণ আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পরও সেটিকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা হয়েছিল। এবার বাংলাদেশের জনগণের অর্জন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ। জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এটা অর্জন হয়েছে, ফলে আমি এটাকে গণঅভ্যুত্থান বলি।

ডেইলি স্টার: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আলী রীয়াজ: একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রেখেছেন এবং দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে গোটা রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন যারা সরকারে আছেন, তাদের চ্যালেঞ্জ যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। সবকিছু তারা সঠিক করছেন এমন বলা যাবে না। কিছু সমালোচনাও আছে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় বলব, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা অগ্রসর হচ্ছেন। পিছিয়েও যাচ্ছেন না, থেমেও থাকছেন না। তবে, আরও গতিশীল হলে খুশি হতাম।

পুলিশ প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, যেটিকে পুনর্গঠন করা এখনো সম্ভব হয়নি। দেখতে পাচ্ছি অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য এক বা একাধিক শক্তি কাজ করছে। শুধু যে দেশের মধ্য থেকে হচ্ছে তা না, দেশের বাইরে থেকে উসকানি আসছে, এক ধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে আমি বলব, এত দ্রুত মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। আমরা কথা বলব, চাপ রাখব, প্রত্যাশার কথা বলব। কিন্তু এত দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না।

ডেইলি স্টার: উপদেষ্টারা ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। তাদের কারও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে কি একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি সম্ভব?

আলী রীয়াজ: শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনদিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। দ্রুততার সঙ্গে একটি সরকার গঠিত হয়েছে সমাজের বেশ কিছু অংশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে। তাদের একটি প্রধান দায়িত্ব এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা, যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। এর জন্য দরকার কাঠামোগত পরিবর্তন এবং একটি রাজনৈতিক নির্দেশনা বা রোডম্যাপ। রোডম্যাপ বলতে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ না। বরং কীভাবে এগোতে হবে এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য কী হবে—তা সুস্পষ্ট করা। রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী—সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই দিক-নির্দেশনা তৈরি করা সম্ভব। সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। সংস্কারের জন্যে কয়েকটি কমিশন করা হচ্ছে, সেটা ইতিবাচক।

ডেইলি স্টার: আপনি সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছেন। কেন বলছেন?

আলী রীয়াজ: সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছি এ কারণে যে, আমাদের সংবিধান এখন যে অবস্থায় আছে তাতে শুধু কাটা-ছেঁড়া করে বা কিছু ধারার সংশোধন করে কাজ হবে না। সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশকে সংশোধনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই সংবিধান একজন ব্যক্তিকে অনেক ক্ষমতাশালী করে তোলে৷ স্বীকার করতে হবে যে এই সংবিধানের মধ্যে এমন কিছু পথ আছে যা স্বৈরাচারী ব্যবস্থা তৈরি করে।

এবারের অভ্যুত্থান মানুষের মধ্যে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, তার বাস্তবায়ন শুধুমাত্র সংবিধান সংশোধন দিয়ে সম্ভব না। আমি বলছি, স্বৈরাচার তৈরির পথ বন্ধের জন্য সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন। পাশাপাশি মানবাধিকার নিশ্চিত করা, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, তার জন্যে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা তৈরির জন্যও এটি প্রয়োজন।

ডেইলি স্টার: সংবিধান পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে পারে?

আলী রীয়াজ: সংবিধান পুনর্লিখনের কাজ শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে করতে হবে। আমি সম্ভাব্য তিনটি পথের কথা বলছি। একটি হলো, গণপরিষদ তৈরি করা যেতে পারে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গণপরিষদ তৈরি করতে পারে। গণপরিষদ তৈরির পর সেখানে একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করে তা রেফারেন্ডামের জন্য উপস্থাপন করা যেতে পারে।

আরেকটি যেটি হতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের খসড়া তৈরি করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সংকলিত করে গণভোটের আয়োজন করতে পারে। তৃতীয় পথ হলো—সংবিধান কনভেনশন। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে তার ভিত্তিতে সংবিধান কনভেনশন তৈরি করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে যে খসড়া তৈরি হবে সেটি গণভোটে যাবে।

সবক্ষেত্রেই আমি গণভোটের কথা বলছি এ কারণে যে, জনগণের মতামতের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। এই তিনটি পথের বাইরেও আরও উপায় থাকতে পারে। তার আগে আমাদের ঠিক করতে হবে যে, আমরা কি সংবিধান পুনর্লিখন চাই, নাকি আগে যে ধরনের সংশোধন হয়েছে তেমন কিছু চাই।

ডেইলি স্টার: দেশে গণমামলা বা গণগ্রেপ্তার বা ইচ্ছামতো রিমান্ড চলছে আগের মতোই। এটি ঠেকানোর উপায় কী?

আলী রীয়াজ: সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে গণমামলা হচ্ছে। সব যে সঠিকভাবে হচ্ছে তা নয়। কিন্তু মানুষের ক্ষোভের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সরকারের উচিত আলাদা সেল গঠন করে প্রত্যেকটি মামলা পর্যালোচনা করা। যেসব অভিযোগের যথাযথ ভিত্তি আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেই মামলা করা যেতে পারে।

আমার শঙ্কা হলো—এ ধরনের গণমামলা প্রতিষ্ঠিত হলে প্রকৃত মামলাগুলো যথাযথ গুরুত্ব পাবে না। জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীকে কোনো অবস্থাতেই কমান্ড রেসপনসিবিলিটির বাইরে রাখা যাবে না। কারণ তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের নির্দেশদাতা এবং সেগুলোর দায়-দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার সেভাবেই করা দরকার৷ আর যারা অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে, সেগুলো অনেকক্ষেত্রে ক্রিমিনাল অফেন্স। সেগুলোর বিচার হতে হবে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী।

পাশাপাশি এটিও মনে রাখতে হবে, গত ১৫ বছরে অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে, গুম হয়েছে, বিভিন্ন আন্দোলনে পুলিশি হামলা হয়েছে। এগুলোরও বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা যারা বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন, তাদের এর দায় থেকে মুক্তি দিতে পারবেন না। যারা ভিকটিম তাদের ন্যায়বিচার দিতে চাইলে সব দোষীর বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডেইলি স্টার: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এটা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আলী রীয়াজ: যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক হয় সমতার ভিত্তিতে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গত ১৫ বছরের সম্পর্কে সমতা ও ন্যায্যতার লেশমাত্র ছিল না। বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত যা করার সবই করেছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের আশায় অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের পতনের পর এ বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে ভারতের অনীহা দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া হলেও, ভারতের লক্ষণ নেতিবাচক। এটা ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো সিদ্ধান্ত নয়। কেন তারা বাস্তবতা মেনে নিতে পারছে না, সে প্রশ্ন ভারতকে করা দরকার। এমন টানাপোড়েন বাংলাদেশ তৈরি করেনি, ভারতই করেছে। তাই ভারতকেই এর সমাধান করতে হবে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

ডেইলি স্টার: শেখ হাসিনার পতনের পর বলা হচ্ছে আমরা মার্কিন বলয়ে ঢুকে যাচ্ছি। এটি কতটা ঠিক?

আলী রীয়াজ: এ ধরনের বক্তব্য যারা দিচ্ছেন, তারা কি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বা লক্ষণ দেখাতে পারছেন? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি ৫ আগস্টের পরে পরিবর্তন হয়েছে? আমি অন্তত তা মনে করি না। মার্কিন বলয়ে ঢুকে যাওয়ার কথা বলা মানে ভুল তথ্য ছড়ানো। এই বলয় বা ওই বলয় নিয়ে থাকা সার্বভৌমত্বে আঘাত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখনো অনেক অমীমাংসিত বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান হতে হবে। সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে শুধু ভারত নয়, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। জাতীয় স্বার্থ হবে তার দিক-নির্দেশনা, সার্বভৌমত্ব হবে তার প্রধান দাঁড়াবার জায়গা।

ঢাকা সরাসরি ওয়াশিংটনের সঙ্গে কথা বলবে, টোকিওর সঙ্গে বলবে, ব্রাসেলসের সঙ্গে বলবে, নয়াদিল্লির সঙ্গে কথা বলবে। এটিই স্বাভাবিক একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য। আগে এমন একটি ধারণা ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের চোখ দিয়ে দেখছে। এখন কি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ নীতির পরিবর্তন ঘটবে যে তারা ভারতকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করবে? এমন লক্ষণ কিন্তু সুস্পষ্ট হয়নি।

Comments