শেরপুরে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে, এখন সংকট খাদ্য ও সুপেয় পানির

দুর্গত মানুষের কাছে খাবার পানি পৌঁছে দিচ্ছেন এক স্বেচ্ছাসেবী। ছবি: স্টার

শেরপুরের বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও এখনো পানিবন্দি আছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।

আজ সোমবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানির প্রবল স্রোতে অনেকের ঘরবাড়ি উপড়ে গেছে। ভেসে গেছে আসবাবপত্র, রক্ষিত খাবার। তাতে বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক পরিবার।

বালুরঘাট এলাকার মারিয়া খাতুন বলেন, 'গত দুইদিন স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া শুকনো খাবার খেয়ে আছি। সরকারি কোনো সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি।'

ঝিনাইগাতির ষাটোর্ধ্ব তালেব মণ্ডল বলেন, 'খাবার পানি নেই। রান্না করে খাওয়ার মতোও কিছু নেই। সব বানের পানিতে ভেসে গেছে।'

ছবি: স্টার

স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক এ বন্যায় এখন পর্যন্ত আট জনের মৃত্যু হয়েছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ভেঙে গেছে। তবে নালিতাবাড়ী-শেরপুর সড়কের ভাঙা জায়গাগুলোতে বস্তা ফেলে ছোট যান চলাচলের উপযোগী করা গেলেও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

এর আগে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৪২টি প্রাথমিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে প্রশাসন।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুকল্প দাস দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যায় জেলার প্রায় এক লাখ ৭২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নষ্ট হয়েছে পাঁচ উপজেলার প্রায় আটচল্লিশ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এর ভেতর আছে আমন ধান ও শীতের আগাম সবজি। পানি পুরোপুরি নামার পর হিসাব আরও স্পষ্ট হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, কেবল ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলাতেই ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রাথমিক হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকার বেশি। পুরো জেলার সার্বিক ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।

ছবি: স্টার

এছাড়া জেলার গ্রামীণ সড়কগুলো এখনো বন্যার পানিতে ডুবে আছে বলে জানান শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান জানিয়েছেন, জেলার ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, চেল্লাখালী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।

শেরপুর জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে আট হাজার মানুষের মাঝে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বললেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে আছে বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। দুর্গতদের উদ্ধার করা হয়েছে। শুকনো খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলমান আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

1h ago