মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস-এপিএসরাও বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে শুধুমাত্র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাই বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেননি, তাদের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) ও সহকারী ব্যক্তিগত সচিবরাও (এপিএস) বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন (সহকারী) জাহাঙ্গীর আলমের কথা কে না জানেন—যিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনেছেন। এ তথ্য হাসিনা নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন।

ক্ষমতার খুব কাছে থাকায় এই পিএস-এপিএসরা কোটি কোটি টাকা বানাতে পেরেছেন এবং সেগুলো ব্যবহার করে বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি করেছেন।

একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর ফোন কল ধরা, মিটিংয়ের সময়সূচির হিসাব রাখা কতটা লাভজনক হতে পারে তা এই পিএস-এপিএসরা গত ১৫ বছর ধরে উপভোগ করেছেন।

কাগজ-কলমের হিসাব-কিতাবই তাদের বিলাসবহুল জীবনের যাত্রা তৈরি দিয়েছে। টেন্ডার কারসাজি, কমিশন এবং চাকরিতে পদোন্নতি বা বদলির মতো কাজে কাউকে 'সহযোগিতা'র মাধ্যমে তারা পকেটস্থ করেছেন কোটি টাকা।

আর এসবই করা হয়েছে তাদের বসদের নাম ব্যবহার করে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

দুদক ইতোমধ্যে অন্তত ২৫ সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

কিন্তু দুদকের নজর তাদের পিএস-এপিএসদের উপরও ছিল। কারণ, তারা ক্ষমতাসীনদের কাছে থাকাকে শোষণ ও উপার্জনের হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছিলেন।

এমন অন্তত ১০ সচিব দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে। তারা এখন তাদের সন্দেহজনক বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়ে প্রশ্নের মুখে।

তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস হাফিজুর রহমান লিকু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক পিএস ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস ও তার এপিএস মনির হোসেন, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সাবেক এপিএস মো. শাহাবুদ্দিন, সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাবেক এপিএস এএনএম আহমদুল বাশার, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সাবেক এপিএস মিজানুর রহমান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এপিএস মীর মোশাররফ হোসেন, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ড. এনামুর রহমানের এপিএস শামীম আহমেদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস হাসনাত হোসেন ও সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সাবেক এপিএস এমদাদুল হক।

অবৈধভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

লিকুর বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার স্ত্রীর নামে রামদিয়া কাশিয়ানীতে মেসার্স রাফি এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজের নামে কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন।

এ ছাড়া, তিনি মোহাম্মদপুরের মধু সিটিতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং উত্তরায় একটি সরকারি প্লট অবৈধভাবে নিয়েছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, লিকু গোপালগঞ্জে ১০ ডিসিমাল জমি কিনেছেন, পৈতৃক জমিতে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছেন এবং তার শ্যালকের নামে ছয়তলা ও ১০তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন।

তিনি কুয়াকাটায় ওশান ব্লু রিসোর্ট এবং তার আত্মীয়দের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির মালিক বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, হারুন অর রশিদ বিশ্বাস ও মনির হোসেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ঘুষ সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন।

তারা জেলা পুলিশ সুপার এবং অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এনামুর রহমানের এপিএস শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি এগ্রো পার্কসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তিনি পোড়াবাড়িতে ১০০ বিঘা জমিতে মাছের খামার ও 'বেলা' নামে একটি ইনস্টিটিউট এবং সাভারে দুটি ফ্ল্যাট ও গুলশানের নাভানা টাওয়ারে একটি অফিসের মালিক বলে অভিযোগ রয়েছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাবেক এপিএস বাশার ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিআইডব্লিউটিএতে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছিলেন বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

8h ago