বলপ্রয়োগে বিক্ষোভ দমনের যে পরিকল্পনা করেছিলেন শেখ হাসিনা

আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি। স্টার ফাইল ফটো

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তারা জাতিসংঘের তদন্তদলকে জানিয়েছেন, গত ১০ জুলাই রাতে হাসিনা ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালককে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপনে আলোচনার অনুমতি দিয়েছিলেন।

১৬ জুলাইয়ের পর তিনি ডিজিএফআইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যুক্ত করেন, যাদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনে করেছিলেন যে যদি তারা তাদের  'হেভি ইউনিট' মোতায়েন করে তবে শুধু জিহাদিরাই রাস্তায় থাকবে অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা বাড়ি চলে যাবে।'

কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এবং ফোনে যোগাযোগ করে তাদের কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করতেন ও নির্দেশনা দিতেন।

জাতিসংঘ তদন্ত দল বিষয়টি নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের ফোনের কল লগ পর্যবেক্ষণ করেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, হাসিনা প্রতিদিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিক্ষোভ সম্পর্কে প্রতিবেদন পেতেন এবং তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা—ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)—সরাসরি তাকে রিপোর্ট দিত।

কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, '৪ আগস্ট, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন যেখানে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা অংশ নেন। তারা ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ জারি এবং তা কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।'

'৪ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠক হয়। সবাই একমত হন যে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় প্রবেশ ঠেকাতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে মোতায়েন থাকবে এবং দরকার হলে বলপ্রয়োগ করা হবে।'

বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাতিসংঘ মিশনকে জানান, পরিকল্পনা ছিল সেনাবাহিনী ও বিজিবি সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করে ঢাকায় ঢোকার পথ বন্ধ করে দেবে এবং পুলিশ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

জাতিসংঘ দল গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালকের দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার অনুলিপি পেয়েছে।

প্রথম বার্তাটি আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে এসেছিল বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে তারা ঢাকায় কোন কোন রুট ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের জানিয়েছিল। দ্বিতীয় বার্তাটিতে একটি ভিডিও ছিল যেখানে মিছিলে আসারা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরক্ষা লাইন কীভাবে অতিক্রম করবে তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

জাতিসংঘের তদন্ত দল একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English
Magura child rape case

Magura rape: Main accused charged with murder

A month after the death of the eight-year-old girl, who was brutally raped while visiting her sister’s in-laws in Magura, police have pressed murder charges against the main accused.

5h ago