ঈদের মোনাজাতে ‘খালেদা জিয়ার নাম না বলায়’ ইমামকে যুবদল নেতার হুমকি

অভিযুক্ত ফতুল্লা থানা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক সৈকত হাসান ইকবাল৷ ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নে ঈদ জামাত শেষে দোয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় ইমামকে 'চাকরিচ্যুত করার' হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় এক যুবদল নেতা।

কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহের দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন চরকাশীপুরের আঞ্জুবাহার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল হক।

তার অভিযোগ, নামাজ শেষে দোয়ায় খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করায় তাকে হেনস্থা করেছেন ফতুল্লা থানা যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক সৈকত হাসান ইকবাল।

বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক ইমদাদুল তাকে 'হেনস্থা ও তার চাকরি কেড়ে নেওয়ার' হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসে ইমাম ইমদাদুল 'ঈদের দিনে ঈদগাহ থেকে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম...' শিরোনামে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করেন। সেখানে স্থানীয়রা অনেকে যুবদল নেতার নেতিবাচক আচরণের জন্য নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। লেখাটি শতাধিক ব্যক্তি শেয়ারও করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পৌনে ৮টার দিকে কাশীপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে দোয়ায় ইমাম দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ সকলের সুস্থতা কামনা করেন। তবে, বিশেষ কারও নাম দোয়ায় উল্লেখ করা হয়নি।

দোয়া শেষে ইমাম ইমদাদুল হককে ঘিরে ধরেন যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবাল ও তার অনুসারীরা। অনুরোধের পরেও দোয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করে দোয়া প্রার্থনা না করায় চটে যান ইকবাল। ইমামের সাথে তিনি উচ্চবাচ্য করতে থাকেন। পরে মুসুল্লিদের প্রতিবাদের মুখে যুবদল নেতা ও তার অনুসারীরা সেখান থেকে সরে যান বলে জানান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক মুসুল্লি।

যোগাযোগ করা হলে মুফতি মুহাম্মদ ইমদাদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নামাজ শুরু আগে বিএনপি-সমর্থক স্থানীয় এক ব্যক্তি (যিনি ঈদগাহ কমিটিরও সদস্য) তাকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা দোয়া করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি দোয়ায় অসুস্থ সকলের আরোগ্য কামনা করেন, বিশেষ কারও নাম উল্লেখ করেননি।

ইমদাদুল হক বলেন, 'আমি নামাজ শেষ করে যথারীতি দোয়া করি এবং সেখানে কারো নাম উল্লেখ করি নাই। কারণ এটি আম-মজলিস। এখানে সব দলের লোকই আছে। তাই বিতর্ক এড়াতে নির্দিষ্ট দলের কারো নাম উল্লেখ করা উচিত হবে না ভেবেই তা করিনি। তাছাড়া, উনি (খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই, সুতরাং তার নাম উল্লেখে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। আমি সকলের রোগমুক্তি কামনা করেছি। কিন্তু নামাজ শেষে যুবদল নেতা ইকবাল আমার চাকরি খেয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। আমি অনুরোধের পরও কেন তার নাম নেইনি সেজন্য তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। খুবই আগ্রাসী আচরণ ছিল তার। মুসুল্লিরা তখন প্রতিবাদ জানালে থামেন তিনি।'

যুবদল নেতার 'দুর্ব্যবহারের' জন্য ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন ইমদাদুল হক।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবদল নেতা সৈকত হাসান ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি তার (ইমামের) সাথে খারাপ ব্যবহার করি নাই। আমি তাকে শুধু বললাম, অনুরোধের পরও আপনি কেন খালেদা জিয়ার নাম নিলেন না। উনি বললেন, উনি বাধ্য না। তখন উনি কই চাকরি করেন জানতে চাই। জানলাম, উনি যেই মসজিদে চাকরি করেন সেই মসজিদের সভাপতি আমাদের ছোটভাই।'

ইমামের চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকির অভিযোগও অস্বীকার করেন সৈকত।

Comments

The Daily Star  | English

Familiar Dhaka in an unfamiliar mood

The familiar city now appears in an unfamiliar form—no traffic jams, no honking, no packed footpaths

14m ago