দুই উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয় কর্মচারী নেতাদের আলোচনায় ফল আসেনি, বুধবার আবার বৈঠক

সচিবালয়। ছবি: সংগৃহীত

'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকারের দুই উপদেষ্টা। বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো ফল আসেনি। তবে আগামী বুধবার আবারও বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, বাদিউল কবীর এবং কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' জারির ফলে সারাদেশের কর্মচারীদের ক্ষোভের কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আজ বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম জানিয়েছে, উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক হলেও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার এবং পরশু বুধবার তাদের গণসংযোগ কর্মসূচি চলমান থাকবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য ফোরাম আরও জানিয়েছে, উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে কর্মচারী নেতারা তাদের ক্ষোভের কারণগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে—

প্রথমত, অধ্যাদেশে অনানুগত্যের জন্য চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে। কোনো অফিস প্রধানের কথা যদি নৈতিক-মান সম্পন্ন কোনো কর্মচারী না শোনে, তখন সেই ভালো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনানুগত্যের অভিযোগ এনে তাকে চাকরিচ্যুত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অনানুগত্য প্রমাণে কর্মচারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হবে। এ অধ্যাদেশ বহাল রাখা হলে কর্মকর্তারা নিজের ইচ্ছামতো যখন-তখন যে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য চাকরিচ্যুত হবে। কর্তৃপক্ষের অন্যায় ও খামখেয়ালিপনার শিকার হতে পারেন কর্মচারীরা।

তৃতীয়ত, কর্মস্থলে অনুপস্থিত বা বিরত থাকতে উসকানি বা প্ররোচিত করার জন্য চাকুরিচ্যুত হবে। এর মানে—কর্মচারীরা তাদের ন্যায্যতা-প্রাপ্যতার বিষয়ে কোনো ধরনের দাবি দলবদ্ধভাবে উত্থাপন করতে পারবে না। এতেও কর্তৃপক্ষের অন্যায় ও খামখেয়ালিপনার শিকার হতে পারেন কর্মচারীরা।

চতুর্থত, কর্মে উপস্থিত বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করার জন্য চাকরিচ্যুত হবে। এতে করে কতিপয় কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারী, মনগড়া, কাল্পনিক ও খামখেয়ালির কারণে গায়েবি অভিযোগে বিনা তদন্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

পঞ্চমত, জারি করা অধ্যাদেশে কর্মচারীর অপরাধ তদন্তের সুযোগ রাখা হয়নি। অপরাধীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। তদন্ত ছাড়া একজন কর্মচারী দোষী না নির্দোষ, অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা কীভাবে প্রমাণ হবে? এই ধরনের ধারার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা অনেক বেশি।

ষষ্ঠত, নিবর্তনমূলক এই অধ্যাদেশটি নারীদের জন্য আরও বেশি ভয়ংকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অসাধু কর্মকর্তা তার অধীনস্ত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নানাভাবে নাজেহাল করতে পারবেন। কর্মরত নারী সদস্যদের বাজে প্রস্তাব দিলে এবং তাতে সাড়া না পেলে ভিন্ন আঙ্গিকে অনানুগত্যের অভিযোগ আনতে পারে। যে কারণে নারী কর্মচারীদের জন্য অধ্যাদেশটি অনিরাপদ হবে।

সপ্তমত, কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বার্তা বা সংবাদ ই-মেইলে নোটিশ আকারে পাঠানোর বিধান করা হয়েছে। এতে সমস্যা তৈরি হবে। বৈরী আবহাওয়া ও নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেক সময় ই-মেইল ওপেন করা হয় না। অনেকে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে পারে। ইন্টারনেট সচরাচর নাও থাকতে পারে। ফলে অভিযুক্ত কর্মচারী জানবেই না তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে এবং জবাব দিতে হবে। এটা কৌশলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে।

কর্মচারী নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারী নেতাদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়েছে। অধ্যাদেশের আপত্তিগুলোর ওপর আরও অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতাদের সঙ্গে উপদেষ্টারা আগামী বুধবার আবারও বৈঠকে বসবেন।

Comments

The Daily Star  | English

New Tk 100 banknote to be released next week

The new note will be similar in size to existing one

37m ago