চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জনগণকে ‘রুখে দাঁড়াতে’ বললেন আইন উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: স্টার

স্থানীয় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ কাজে স্থানীয় লোকজনকে প্রশাসনও সহযোগিতা করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আজ সোমবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও জুলাইযোদ্ধাদের স্মরণে নারায়ণগঞ্জে দেশের প্রথম 'জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

আসিফ নজরুল বলেন, 'স্থানীয়ভাবে নানা ধরনের আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারী, বিশৃঙ্খলা, ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। জুলাইয়ের সময় আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকে মহাপরাক্রমশালী ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করেছিলেন। অবশ্যই আপনার ঐক্যবদ্ধ থাকলে চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে পারবেন। আমাদের সরকারের দায়িত্ব থাকবে, পাশাপাশি আপনারা স্থানীয় চাঁদাবাজ, লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। প্রশাসন আপনাদের সহযোগিতা করবে।'

জুলাই আন্দোলনে 'গণহত্যা'র বিচারে কোনো ঘাটতি থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দৃঢ় কণ্ঠে জানাতে চাই, বিচার পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলছে। সেখানে কোনোরকম গাফিলতি থাকবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে গতিতে বিচার এগিয়ে চলেছে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের শাসনামলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।'

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে জুলাই-আন্দোলন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মামলাগুলোর তদন্তও দ্রুত শেষ করে ৫ আগস্টের আগে অভিযোগপত্র দাখিল করার জন্য পুলিশকে 'অনুরোধ' করা হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের এসপির সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা অনেকগুলো মামলার অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন। তাদের অনুরোধ করেছি, ৫ আগস্টের আগে মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়ার জন্য। এসপি বলেছেন, অনেকগুলো মামলার চার্জশিট দিতে পারবেন।'

'চার্জশিট দেওয়া মাত্র আমরা বিবেচনা করে দেখব। বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজন হলে দ্রুত বিচার আইনে সমস্ত অপরাধের বিচার করব,' যোগ করেন তিনি।

জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট মামলার বাদীদের 'নিরাপত্তা নিশ্চিত' করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি 'জুলাই আন্দোলনের ঐক্য' ধরে রাখারও তাগিদ দেন। তিনি বলেন, 'আমরা বৈষম্যহীন, শোষণহীন নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে, শাসক এসে অপশাসকে পরিণত হবে না। আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে পারলে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।'

জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে উপদেষ্টা বলেন, 'জুলাই মাস এলে গত বছরের জুলাইয়ের কথা মনে পড়ে। এই জুলাই মাসে সূচিত আন্দোলনে গত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশে যে স্বৈরতন্ত্র, যে ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ ৩৬ দিনে না, খেয়াল করে দেখবেন মাত্র ১৫ দিনে ফ্যাসিস্ট শাসককে উৎখাত করেছে, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।'

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছেন বলেও জানান উপদেষ্টা।

এসময় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৫৬ জন শহীদ হয়েছেন। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে লড়াই করে তারা প্রাণ দেননি। একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই ৫৬ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন। আমরা, আপনারা একসঙ্গে মিলে এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটা সুন্দর, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ব।'

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনকে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘরে' রূপান্তরের কথা জানিয়ে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, 'গণভবনকে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা আশা করব ৫ আগস্টে উদ্বোধন করার। ওইটা হচ্ছে স্বৈরাচারের ঠিকানা। আমরা ওই ঠিকানাকে সংরক্ষণ করে দেখাতে চাই, এখানে ফ্যাসিবাদ কীভাবে মানুষকে অত্যাচার করত, কীভাবে তাদের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের মানুষ এসে দেখবে।'

নারায়ণগঞ্জ নগরীর হাজীগঞ্জ এলাকায় রেলওয়ের জমিতে 'জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ' স্থাপন করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৬ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা ফারহানা মানিক মুনা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রথম দাবি জানান। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।

আজকের অনুষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদ ও হতাহত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন জালকুড়ি এলাকায় শহীদ দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ আদিলের মা আয়েশা আক্তার। তিনি শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণেরও দাবি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

6h ago