‘সাংবাদিক’ বলার পরেই বিচারকের সামনে মারধর

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নার জামিন শুনানিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এক সাংবাদিক।
বিচারক এজলাসে থাকা অবস্থাতেই ওই সাংবাদিককে কয়েকজন আইনজীবী কিল, ঘুষি, লাথি মারেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ্ পিয়াসের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির সাংবাদিক।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির একটি অনুষ্ঠান থেকে সাবেক এমপি লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার শাহবাগ থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন শুনানির তারিখ ছিল। লতিফ সিদ্দিকীতে আদালতে হাজির করা না হলেও সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সাংবাদিক পান্নাকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এসময় পান্নার মাথায় হেলমেট, এক হাতে হাতকড়া, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর হেলমেট খোলার পর সাংবাদিক পান্না পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনারা এমন কেন করছেন আমি তো আপনাদের শত্রু নই।'
এ সময়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ রোমিও তাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে?'
সাংবাদিক পান্না উত্তর দেন, 'না।'
ঠিক সে সময় আইনজীবী মহি উদ্দিন আহমেদ কোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য মুক্তাদির রশীদকে ধমকাতে থাকেন।
তখন সাংবাদিক রোমিও বলেন, 'আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা শুধু বিচারকের আছে। তিনি বললে বের হয়ে যাব। তাকে বলতে দিন।'
এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই আইনজীবী মুক্তাদির রশীদ রোমিওকে মারতে তেড়ে যান। সে সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক সিয়াম তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
এরই মাঝে বিচারক এজলাসে ওঠেন এবং মামলার শুনানি শুরু হয়।
সিয়াম তখন আইনজীবীকে বলেন, 'তিনি (মুক্তাদির রশীদ) বহিরাগত না, সাংবাদিক।'
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবী মহি উদ্দিন বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠেই সিয়ামের কানে ঘুষি দেন। এসময় সিয়াম তার হাতে থাকা সময় টিভির মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
তখন আইনজীবী তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে মারধর শুরু করেন। এতে রক্তাক্ত হন সিয়াম।
সে সময় সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদকেও আইনজীবীদের চাপে এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
আদালত কক্ষে এমন পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান বিচারক। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে সিয়াম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি আমাকে মারধর করল কয়েকজন আইনজীবী। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।'
এরপর ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে বিচারক আবার এজলাসে আসেন। শুনানি শেষে আদালত লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
জানতে চাইলে সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হেলমেট, হ্যান্ডকাফ ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পুলিশ বাঁশি ফুঁ দিতে দিতে সাংবাদিক পান্নাকে আদালতে হাজির করে। তাকে প্রচণ্ড বিধ্বস্ত দেখেছি। এজন্য আমি তার খোঁজ নেই।'
'কিন্তু তখন আইনজীবী মহিউদ্দিন আমাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ধমকাতে থাকেন। ওই আইনজীবী আমাকে মারতে এলে সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম তাকে ঠেকান। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই আইনজীবী সিয়ামকে মারতে শুরু করেন,' বলেন তিনি।
মুক্তাদির রশীদ আরও বলেন, 'তারা আমাকে গালিগালাজও করেন। পাশেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল, নিছক দর্শকের মতোই তারা দেখছিল।'
অভিযুক্ত আইনজীবী মহি উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধাক্কাধাক্কির মতো একটা ঘটনা হয়েছে, অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমি কাউকে আঘাত করিনি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। শোনার পর সেখানে যাই। দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করি।'
ঘটনা তদন্তে অ্যাসোসিয়েশন থেকে কোনো কমিটি করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি দুই পক্ষকেই ডেকেছিলাম সমস্যা সমাধানের জন্য।'
Comments