জাকসু নির্বাচন

জাবিতে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করতে কাজ করব: তানজিলা হোসাইন বৈশাখী

তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। জয়ী হলে ক্যাম্পাসে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করতে কাজ করতে চান এই জিএস প্রার্থী।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তানজিলা হোসাইন বৈশাখী বলেন, আমি সারাজীবনই নিজের ও অন্যদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন ছিলাম। কোনো অন্যায় হলে কখনোই মেনে নিতে পারতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে।

তার ভাষ্য, 'গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে জাবি ক্যাম্পাসে আছি। এই ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা জায়গা আমি চিনি, কোথায় কী সমস্যা সবকিছু জানি। সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। জাকসু হওয়ার আগেও এগুলো নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা প্রশাসনকে প্রেশারে রাখার চেষ্টা করেছি।'

তিনি বলেন, 'জাকসু যেহেতু সরাসরি শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট, জাকসুতে নির্বাচিত হলে অধিকার আদায়ে কাজ করা আরও সহজ হবে। শিক্ষার্থীরাও জানে যে, আমি অধিকার আদায় করে আনতে পারি। আমি মনে করি, পরিবর্তন করতে হলে পলিসি মেকিংয়ের অংশ হয়েই করতে হবে। সে ভাবনা থেকেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।'

'তা ছাড়া আমাদের দেশে নারীরা তো রাজনীতিতে আসতে চায় না। কারণ জায়গাটা তাদের জন্য কঠিন অনেক। নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়। সেই জায়গা থেকে আমি তাদের জন্য রোল মডেল হতে চাই। দেখাতে চাই যে, যোগ্যতা থাকলে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেও এগিয়ে যাওয়া যায়।'

নির্বাচনে জয়ী হলে কী করবেন, জানতে চাইলে ছাত্রদলের এই নেত্রী বলেন, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতীক হচ্ছে জাকসু। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা। সে কারণেই প্রতি বছর যেন জাকসু হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ করব। জাকসু কখনোই বন্ধ হতে দেওয়া যাবে না। নানা ষড়যন্ত্র হবে জাকসু বন্ধে। কিন্তু আমরা সব ষড়যন্ত্র রুখে নিয়মিত জাকসু নিশ্চিত করব।

'এই ক্যাম্পাসে মূল সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। যেমন: ক্যাফেটেরিয়ায় নিচতলা ও উপরতলায় একই বাবুর্চি। অথচ খাবারের মানে আকাশ-পাতাল তফাৎ। শিক্ষকরা হঠাৎ হঠাৎ নিজেদের ইচ্ছেমতো ক্লাস ক্যানসেল করে দেন, যখন ইচ্ছে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। কারণ তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আবার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট বা সার্বিক যোগ্যতার থেকেও রাজনৈতিক লবিং বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এগুলো রোধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতে কাজ করব। একইসঙ্গে শিক্ষক ইভালুয়েশন সিস্টেম চালু করতে হবে। তাহলে তাদের মধ্যে নিজেদের কোয়ালিটি ডেভেলপ করার মানসিকতা তৈরি হবে।'

নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুরুতর উল্লেখ করে বৈশাখী বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুব শঙ্কার। শুধু বাহ্যিক না, নন-কনভেনশনাল সিকিউরিটির কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। যেমন: ৫ আগস্টের পর আমরা ক্যাম্পাসে নারীদের মোরাল পুলিশিংয়ের শিকার হতে দেখছি, অনলাইন হয়রানির শিকার হতে দেখছি। মেয়েদের হল ও ছেলেদের হলের নিয়মের মধ্যে পার্থক্য আছে। ছেলেরা সারারাত হলে আসা-যাওয়া করতে পারলেও মেয়েরা রাত ১১টার পর হল থেকে বের হতে পারে না। এই বৈষম্য কেন থাকবে? মেয়েদের হলে সিলিং ফ্যান দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে, মেয়েরা নাকি সুইসাইড করবে। ২০২৫ সালে এসেও এই ধরনের ভাবনা কীভাবে মাথায় আসে?

'মেয়েদের হলের ছাদ-বারান্দার করিডর বন্ধ থাকে। ছেলেদের হলের ক্যানটিন অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকলেও মেয়েদের হলের ক্যানটিন রাত ৮-৯টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। অথচ অনেকের টিউশনি শেষ করে পৌঁছাতে ১০টার বেশি বেজে যায়। জরুরি প্রয়োজনে মেয়েদের হল থেকে হাসপাতালে যেতে যে পরিমাণ প্রশাসনিক ধাপ পার হতে হয়, সেটা খুব কঠিন। মেয়েদের খেলাধুলার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাও নেই। ক্যাম্পাস ও হলে নারী বৈষম্য যেন দূর হয়, তা নিশ্চিতে কাজ করব।'

তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানকার দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস পাওয়া যায় না বা দোকান আগে বন্ধ হয়ে যায়। মেয়েদের হলে বা ডিপার্টমেন্টে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন আছে। খুব সুন্দর লাগে দেখতে। কিন্তু একটা মেশিনও ফাংশনাল না। আমাদের পরিবহন সমস্যা আছে, মেডিকেল সেন্টারের অবস্থাও খুব খারাপ, প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না, লাইব্রেরিতে কোনো নিয়ম মানা হয় না। আমি এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা ইনস্টিটিউশনে একটা করে সেল করব, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের অভিযোগ জানাবে। পরবর্তীতে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি এবং অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। তাদের কথা শুনছি, তাদের হয়ে কাজ করার সুযোগ চাইছি। কিন্তু প্রশাসন থেকে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি না। তারা এমনভাবে বিধি-নিষেধ নির্ধারণ করেছে, যেন জাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসের আর দশটা কার্যক্রমের মতোই একটা। ৩৩ বছর পর জাকসু হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা এমন যে কেউ চাইলে অংশ নিক, বা না চাইলে না নিক। অথচ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের উচিত।

'আবার ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিল প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। নির্বাচনের এই সময়টায় পরীক্ষা রেখেছে। আবার নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাস বন্ধ রাখবে। এতে তো অনেক শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাবে। আমরা আশা করব, প্রশাসন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করবে,' বলেন তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

12h ago