দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের হাজারো নেতা-কর্মী প্রাণ দেবে: মির্জা ফখরুল

দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের ‘হাজারো নেতা-কর্মী প্রাণ দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে দলের 'হাজারো নেতা-কর্মী প্রাণ দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন পার্লামেন্ট ইলেকশন দেন। তারা নতুন করে সরকার গঠন করবে, দেশে নতুন একটা সরকার ব্যবস্থা চালু হবে। এখনো সময় আছে সেটা করেন। তা না হলে পালাবার পথও খুঁজে পাবেন না।

আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব বলেন।

তিনি বলেন, 'আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, আমরা মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে চাই।'

তিনি আরও বলেন 'এজন্যে আমরা যেমন জীবন দিয়েছি। আমাদের ইতোমধ্যে ৭ জন প্রাণ দিয়েছে। আমরা হাজারো লোক প্রাণ দেব। গণতন্ত্রকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনব।'

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনাদের এখনো সময়, এখনো সময় আছে- বোধোদয় করেন। কয়েকটি মিটিংয়ে আমি বলেছি, সেইফ এক্সিট করেন, চলে যান, ক্ষমতা ছাড়েন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।'

শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর পল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল কর্মী জেহাদ।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্যের নেতাসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দৈনিক বাংলা মোড়ে জেহাদ স্মৃতি চত্বরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'জনগণের ওপরে আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ কোনোদিন অন্যায়কে মেনে নেয়নি, কোনোদিন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা কাউকে জয়ী হতে দেয়নি। গণতন্ত্রের পক্ষে তারা লড়াই করেছে আজ থেকে নয়, দীর্ঘকাল থেকে, শতবর্ষ থেকে। সেই দেশের মানুষ জেগে উঠছে। এখন আর বলতে হয় না যে, জেগে ওঠো।'

'আমি শুধু অনুরোধ করবো আমাদের তরুণ সমাজকে, আমাদের যুব সমাজকে আরও এগিয়ে আসুন, আরও সামনে আসুন। শুধুমাত্র নিজের কথা চিন্তা না করে, নিজের ভাগ্যের কথা চিন্তা না করে দেশের কথা চিন্তা করুন, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন, চিন্তার করে যুক্ত হোন। এই যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই যে বাংলাদেশকে মুক্ত করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলনে সেই সংগ্রামে আপনারা সবাই যুক্ত হোন এবং জনগণকে সংগঠিত করে আমরা অবশ্যই আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব আহবান করেছেন, 'ফয়সালা হবে রাজপথে', সেই রাজপথেই আমরা তাদেরকে পরাজিত করব।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের নেতা আরেকটা শ্লোগান দিয়েছেন-টেক ব্যাক বাংলাদেশ। অর্থাৎ আমরা কোন বাংলাদেশ ফেরত চাই, যে বাংলাদেশ আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। যেখানে আমরা মানুষের অধিকার রক্ষায় স্বাধীন করেছিলাম, যেখানে সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক ন্যায় বিচার এটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা একটি রাষ্ট্র তৈরি করেছিলাম, জনগণের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র তৈরি করেছিলাম সেই বাংলাদেশ আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই।'

'আমরা এ কথা বলতে পারি যে, বিএনপি বা এই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে, জনগণের পক্ষে কাজ করে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে আজকে জেহাদকে এবং ৯০'র যারা শহীদ হয়েছেন তাদের এবং এই গণতন্ত্র ফেরানো আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করে আর কোনো পেছন দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি- এই হোক আজকে আমাদের শপথ।'

তিনি বলেন, 'এই যে বিদ্যুতের কী অবস্থা দেখেন। এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ বার বিদ্যুৎ চলে যায়, ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকে। অথচ কত ধূয়া, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আতশবাজি ফুটিয়ে বলা হলো- বাংলাদেশ বিদ্যুতে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে- আর কোনো অসুবিধা নাই। তার অবস্থা হচ্ছে এটা (লোডশেডিং)।'

'কারণ কী? কারণ হচ্ছে তাদের (সরকার) চুরি, দুর্নীতি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করে তারা সমানে চুরি করে নিয়ে গেছে। ক্যাপাসিটি চার্জ ২৮ হাজার কোটি টাকা ১ বছরে দিতে হয়েছে এবং দিতেই হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আজকে পোশাক শিল্পের অবস্থা যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা জানেন, গার্মেন্টসের অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে। কারণ পৃথিবীতে চাহিদা কমে আসছে। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে। অন্যদিকে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে গার্মেন্টস ব্যবসা যারা করেন তাদের টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে গেছে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'শ্রমিকদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা এই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে। আমি তো বাজারে খুব কম যাই, সময় পাই না। আমার স্ত্রী যান। প্রতিদিন আমার স্ত্রী আমার কাছে এই অভিযোগগুলো তুলে ধরেন যে, আর যাওয়া যাবে না, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সেগুলোতে ধৈর্য ধরা যাচ্ছে না-এই হচ্ছে মানুষের অবস্থা।'

তিনি বলেন, 'আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ চাই। ইতোমধ্যে আমরা জনগণের কাছে যাওয়া শুরু করেছি। কিছুদিন আগেও আমাদের যারা নিন্দুক তারা বলতেন, আরে বিএনপি নাই, বিএনপির কোনো চিহ্নই নাই, রাস্তায় বিএনপি নাই, মুরোদ নাই, হাঁটুভাঙা- এসব অনেক কথা বলেছে তাই না।'

'এখন কী বলছে? বাবা তোমরা ধমক দিও না। এই যে, আমান উল্লাহ আমান সাহেব একটা ধমক দিয়েছেন- ওদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন টেলিভিশন খুলে দেখি ওদের যত লোক জন আছে খালি ওটাই নিয়ে লেগে পড়েছে। আরে ভাই কোনো কারণ নাই,' বলেন মির্জা ফখরুল।

Comments