গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যত্ন

ছবি: সংগৃহীত

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। তবে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অবস্থা অনেক বেশি নাজুক হয়ে যায় গরমে। 

এ অবস্থায় মায়ের শারীরিক জটিলতা ও যত্ন সম্পর্কে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাহানারা চৌধুরী।

তীব্র গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জটিলতা

ডা. সাহানারা চৌধুরী বলেন, তীব্র গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে, যেগুলো পরবর্তীতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন-

১. তীব্র গরমে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা থেকে 'হিট এক্সোশন হয়, ফলে অল্পতেই অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ হতে পারে।

২. গরমের তীব্রতা বেশি হলে হিটস্ট্রোকের মতো জটিলতাও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাথা ঘোরাতে পারে, অচেতন হয়ে যেতে পারে। 

এ সময় নাড়ির স্বাভাবিক গতি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় নাড়ির স্পন্দন প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার হয়ে থাকে। অতিরিক্ত গরমে নাড়ির স্পন্দন ১০০ থেকে ১২০ হয়ে যেতে পারে। 

গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের বুক ধড়ফড় করা, মাথা ব্যথা, অসংলগ্ন কথা বলা বা বমি হতে পারে। হিটস্ট্রোকে যদি অচেতন হয়ে যান, তাহলে অবশ্যই তা বাচ্চার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

৩. পানিশূন্যতার কারণে শরীরে হিট ক্র্যাম্প হতে পারে, এতে তীব্র ব্যথা হয়। অতিরিক্ত ঘামের জন্যও ক্র্যাম্পিং হতে পারে। হিট ক্র্যাম্প প্রথমে হাত-পায়ে হয়। 

জরায়ুতে বাচ্চা থাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ পরপর জরায়ু সংকুচিত হয়, আবার ছেড়ে দেয়, যেটাকে ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন বলা হয়। 

গর্ভাবস্থায় নয় মাস ধরেই এমনভাবে পেট শক্ত হয়ে আসে। কিন্তু তীব্র গরমে পেট শক্ত হয়ে আসা বেড়ে যায়। তাই এই গরমে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের যারা ব্যায়াম করেন, অতিরিক্ত কাজ করেন অথবা অনেক রোদে হেঁটে অফিসে বা কাজে যান তাদের এসব পরিহার করতে হবে। তা না হলে হিট ক্র্যাম্প হবে অনেক বেশি।

৪. পানিশূন্যতার কারণে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যাবে। সারাদিনে যেখানে ৮-১০ বার প্রস্রাব হওয়ার কথা, সেখানে ২-৩ বার প্রস্রাব হবে। অনেক সময় প্রস্রাবে তীব্র গন্ধ হতে পারে।

৫. পানিশূন্যতার কারণে হার্টবিট বেড়ে যাবে। নিজের হার্টবিট নিজেই বুঝতে পারবেন, যেটাকে পালপিটিশন বলা হয়। হাত-মুখ-ঠোঁট শুকিয়ে যাবে, ফেটে যাবে। চোখ গর্তে ঢুকে যেতে পারে অতিরিক্ত পানিশূন্যতায়।

৬. গর্ভাবস্থায় শরীর ফুলে যাওয়াকে ইডিমা বলা হয়। যদি পানিশূন্যতা বেশিক্ষণ থাকে, তাহলে হাতে, পায়ে, মুখে, পেটের চামড়ার মধ্যে ইডিমাগুলো বেশি হবে। কারণ যখন শরীরে পানি কমে যাবে, তখন শরীর পানি ধরে রাখতে চেষ্টা করবে। আর ধরে রাখার কারণে এই জায়গাগুলোতে পানি চলে আসবে।

৭. হিট র‍্যাশ হতে পারে, ঘামাচি, ফুসকুড়ি, চুলকানি হতে পারে।  ম্যালাসমা হতে পারে, মুখ একটু হলুদাভ হয়ে যেতে পারে, লালচে আভা আসতে পারে। 

৮. তীব্র পানিশূন্যতার কারণে অনেক সময় দেখা যায় জরায়ুতে ইডিমা হয়ে যায়, অর্থাৎ সেখানে পানি জমে যেতে পারে। যে কারণে জরায়ু থেকে হালকা রক্তপাত হতে পারে। বেশি রক্তপাত হলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে, বাচ্চা নড়াচড়া কমিয়ে দেয়। মায়ের পানিশূন্যতা হলে বাচ্চারও পানিশূন্যতা হবে।

৯. অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক হয়ে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে, এমনকি বাচ্চার হার্টবিট কমে গিয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

মায়ের যত্ন

ডা. সাহানারা চৌধুরী বলেন, প্রসূতি মায়ের জন্য সাধারণ যত্ন পারিবারিকভাবে নেওয়া হয়। 

তবে বর্তমানে তীব্র গরমের জন্য বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

১. অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। গরমে দৈনিক ২-৩ লিটার বা ৮ থেকে ১৫ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করতে হবে।

২. গরমে নিয়মিত গোসল করতে হবে। এটি ঘাম ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দূর করে শরীরকে সতেজ রাখবে। গোসলের সময় পানির তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিকের নিচে থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া কিছুক্ষণ পরপর ঠাণ্ডা পানিতে শরীর মুছে নিতে হবে।

৩. সুতি, লিনেন কাপড়ের, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। জিন্স, মোটা কাপড়, সিনথেটিক ও গাঢ় রঙের পোশাক পরিহার করতে হবে গরমে।

৪. হালকা ধরনের স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। সেদ্ধ খাবার, ফল, সবজি, সালাদ খেতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, বাইরের হোটেলের খাবার অনেক সময় গরমে পচন ধরে যায়। সেগুলো পরিহার করতে হবে। তাজা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৫. পানির পরিমাণ বেশি আছে এমন খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন-ডাব, স্যালাইন, ফলের রস, দুধ, বিভিন্ন শরবত, তরমুজ, মাল্টা, কমলা।

৬. গরমে অতিরিক্ত কাজ করা যাবে না, অকারণে বারবার বাইরে যাওয়া যাবে না, বাইরে অনেকক্ষণ রোদে থাকতে হবে বা হেঁটে যেতে হবে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সহায়তা নিতে হবে। হালকা বিশ্রাম নিতে হবে ছায়ায় মধ্যে।

৭. তীব্র রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রোদ তীব্র থাকে। এ সময় অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভালো। এ সময় ঘরের পর্দা টেনে রাখতে হবে।

৮. বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা, ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে অথবা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থান দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

৯. পানিশূন্যতায় প্রস্রাব কমে গিয়ে অ্যানুরিয়া হয়ে যেতে পারে, কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের কিডনি খুবই সংবেদনশীল থাকে, অল্প পানিশূন্যতা থেকে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই দিনে ৭-৮ বার প্রস্রাব পরিমাণমতো হয় কি না, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

হিটস্ট্রোকে কী করবেন

ডা. সাহানারা চৌধুরী বলেন, অন্তঃসত্ত্বা মা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত ছায়াযুক্ত ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। ঘরের ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিতে হবে, শরীর মুছে দিতে হবে।  
থার্মোমিটারে তাপমাত্রা ১০০ এর নিচে আসা পর্যন্ত শরীর থেকে তাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এক ঘণ্টা পরও যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তীব্র গরমের এই সময়টায় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যত্নে পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সদয় হতে হবে, সহানুভূতিশীল হতে হবে। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

17h ago