সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ১০ দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

আজ মঙ্গলবার জোটের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো-দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে কালো টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ঋণখেলাপী-ব্যাংক ডাকাত, অর্থপাচারকারী, কালো টাকার মালিক, দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, না ভোটের বিধান ও প্রতিনিধি প্রত্যাহারসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'সরকার "উন্নয়নের" ঢাক-ঢোল পেটালেও দেশের মানুষের বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও চাল-ডাল-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। আর্থিক সংকটের কারণে দেশের প্রায় ৭৩ ভাগ মানুষ খাদ্য গ্রহণ কমিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে ভোট ডাকাতি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার আজ নির্বাসিত। দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের প্রতি জনগণের বিন্দুমাত্র আস্থা নাই।'

'বর্তমান সরকার আমলাতন্ত্র ও পুলিশের উপর নির্ভর করে টিকে আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে।'

দেশবাসীকে তিনি ফ্যাসিবাদী 'সরকারের উচ্ছেদ' ও 'শোষণমূলক পুঁজিবাদী' ব্যবস্থার পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। 

'এই লক্ষ্যে সব বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার সংগ্রাম একান্ত প্রয়োজন,' বলেন রুহিন হোসেন প্রিন্স।

জোটের অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে-সব অগণতান্ত্রিক সংশোধনী ও কালাকানুন বাতিল, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, গুম-খুন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ-মাস্তানদের হস্তক্ষেপ বন্ধ, চাল-আটাসহ ৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বেসরকারি বাণিজ্য বন্ধ, রেশনিং চালু, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ, মজুরি কমিশন গঠনসহ ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ, শিক্ষা-স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা বন্ধ, জাতীয় সম্পদের ওপর জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের সঙ্গে সই করা সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক জনসম্মুখে প্রকাশ এবং দেশের স্বার্থবিরোধী সব অসম চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৫ অক্টোবর সকালে মৈত্রী মিলনায়তনে 'সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার-সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্দলীয় তদারকি সরকার' শীর্ষক মতবিনিময় সভা, ১০ দফা দাবি আদায়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়, আগামী ২২ অক্টোবর শনিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী গণপদযাত্রা এবং নভেম্বর মাসজুড়ে বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলায় জনসভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, সিপিবি সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ বামজোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

5h ago