সমাবেশ ঠেকাতে ময়মনসিংহে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট: বিএনপি
বিএনপির ময়মনসিংহের সমাবেশে যাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা না আসতে পারে, সেজন্য 'অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট' চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দলের বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স।
আজ শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, 'আজকে ময়মনসিংহের এ সমাবেশে জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ— এ ৪ জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা আসার কথা। কিন্তু, সেসব জেলা থেকে ময়মনসিংহে আসার যে রুট, এসব রুটে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। যাতে করে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসতে না পারে। যেসব নেতা-কর্মীরা ভোরে ময়মনসিংহ চলে এসেছেন, তারা কিছু পরিবহন পেয়েছেন। কিন্তু, এখন আর কোনো যানবাহনই পাওয়া যাচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা কিছু পথ হেঁটে, আবার মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে করে ভেঙে ভেঙে সমাবেশে আসার চেষ্টা করছেন। আবার আমাদের নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহে আসার জন্য যেসব গাড়ি ভাড়া করেছেন, গতকাল হঠাৎ করেই সেসব গাড়িও আসবে না বলে জানিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের যেসব নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহে হোটেলে অবস্থান করছেন, গতকাল রাতেও সেসব হোটেলের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মহড়া দিয়েছেন ভয়-ভীতি সৃষ্টির জন্য। প্রত্যন্ত গ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা টহল দিয়েছে। মূলত তারা ভয়-ভীতি সৃষ্টি করতেই এসব কাজ করেছে।'
বিএনপির বিভাগীয় কমিটির এ সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই সেখানে নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছেন।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কোনো ধরনের ধর্মঘট করিনি। মালিক ও শ্রমিকরা মিলে এটা করছে।'
আপনি নিজেও একজন পরিবহন মালিক, আপনি কেন বন্ধ করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা তো ১ বা ২ জন মালিক করেননি। সবাই মিলেই করেছে। আসলে চট্টগ্রামে যানবাহন ভাঙচুর হওয়ায় আতঙ্কিত হয়েই পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে আসলে আমাদের কারো কিছু করার নেই।'
মহড়া দিয়ে ভয়-ভীতি সৃষ্টি অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে বা করার এটা করেছে, তা আমাদের জানা নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোনোভাবেই এরসঙ্গে জড়িত নয়।'
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুম আহমেদ ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ টহল দিয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা চাইব, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।'
এদিকে যানবাহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষও। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
নাহিয়ান নামে এক কলেজছাত্র ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকায় যেতে সকাল থেকেই বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিলাম। পড়ে ভেঙে কিছু পথ এগিয়ে একটি প্রাইভেটকার পাই। এরপর সেটিতে করে ঢাকার জন্য রওনা দেই।'
ঢাকা থেকে আসা এক দম্পতি জানান, রাজধানী থেকে তারা নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা দেন। এখন পর্যন্ত তারা ময়মনসিংহের সৌম্যগঞ্জ ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। অন্য সময়ে এ পর্যন্ত আসতে তাদের সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা খরচ হয়। আজ ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো তারা আবার যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
হালুয়াঘাট যাওয়ার জন্য একই এলাকায় এসে অপেক্ষা করছেন ৮০ বছর বয়সী এক নারী। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকলেও এখনো কোনো বাহন পাচ্ছেন না।
যানবাহন সংকটে রেলস্টেশনে ভিড় করছেন সাধারণ যাত্রীরা। রেল পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মির্জা মোহাম্মাদ মুক্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্টেশনে যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।'
Comments