পরাজয়ের জন্য শামীম ওসমানকে দুষলেন আ. লীগ নেত্রী

আছিয়া খানম
নারায়ণগঞ্জে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আওয়ামী মহিলা লীগের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আছিয়া খানম। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থী ছিলেন আছিয়া খানম সুমি। তিনি আওয়ামী মহিলা লীগের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। ভোটে পরাজয়ের জন্য তিনি দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে দায়ী করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর দেওভোগে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি বলেন, 'আমি আমার ভোটারদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ভোটারদের ভোটে পরাজিত হইনি। আমাকে ওসমান পরিবারের দুই ভাই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান হাতে ধরে পরাজিত করেছেন। ভোটে কারচুপির মাধ্যমে অযৌক্তিক একটা ফলাফল আমার হাতে তুলে দিয়েছে।'

'সারা বাংলাদেশে উনি (শামীম ওসমান) নাকি আইডল। আমার মতো সাধারণ নেত্রী যে কখনো তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিই নাই, তাহলে আমাকে নিয়ে খেলাটা কেন খেলল? নির্বাচন এমন করব আগে বললেই তো আমি নির্বাচনে অংশ নিতাম না।'

রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে আছিয়া খানম সুমি ১৯ ভোট পান। এই ওয়ার্ডে যুব মহিলা লীগের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাদিয়া আফরিন ১২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানির স্ত্রী এবং ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর মেয়ে। সাফায়েত আলম সানি ও শওকত আলী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের অনুসারী।

'জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখলাম। আমার দুঃখ কেবল দলের লোকের সাথেই। আমার দলের লোকই আমাকে অসম্মান করেছে,' বলেন আছিয়া।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'যে নির্বাচন করবে সে যেন ওসমান পরিবারের পারমিশন নিয়ে যেন দাঁড়ায়। এইখানে তাদের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার কোনো ক্ষমতা নাই। আমি আমার দলের এমপির বিরুদ্ধেই বলছি। কারণ উনি এই কাজগুলো করছেন। উনি প্রত্যেক চেয়ারম্যানকে নিয়ে মিটিং করেছেন, নির্বাচনের আগের রাত রাতে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সাদিয়া আফরিনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দিছেন। এই কথা মেম্বার-চেয়ারম্যানরাই আমাকে বলছেন।'

'ছোট্ট একটা নির্বাচন। মাত্র ১৯৯টা ভোট। সেইখানেও তাদের প্রভাব খাটিয়ে নিজের প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে? নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু এখানে এখন আওয়ামী লীগ নাই। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ তাদের দলে নাম নাই। এইখানে সব ওসমান লীগ।'

ভোটগ্রহণের দিনও দুই সংসদ সদস্যের নির্দেশনায় কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আছিয়া খানম। পরাজিত এই প্রার্থী বলেন, '৯০টা ভোটার আমার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। ৯০টা না পাইলেও ৩০টা ভোটও তো পাইতাম। যেই ফলাফল আমাকে দিয়েছে সেইটা স্বচ্ছ না। এইখানে কারচুপি হয়েছে। দুই এমপির কথায় নির্বাচন অফিসাররাও এই কারচুপিতে যুক্ত। ভোটের দিন জানতে পেরেছি, একজন অফিসার বলছে, ১০২টা ভোট হওয়ার পর ইভিএম মেশিনের মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করে ফেলবেন। মেমোরি কার্ড কেন পরিবর্তন করতে হবে? ডিসি স্যার (রিটার্নিং কর্মকর্তা) প্রার্থীদের নিয়ে সভায় বলছিলেন, কেন্দ্রে সাংবাদিকও ঢুকতে পারবে না। অথচ পুরো কেন্দ্রভর্তি শামীম ওসমানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা ছিলেন। কেন্দ্রগুলো সব শামীম ওসমানের লোকজনের দখলে ছিল। বারবার এই কথা বলার পরও পুলিশের কোনো সদস্য কিছু বলে নাই।'

অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, 'এই বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। ফলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।'

কারচুপির বিষয়ে কেন নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেননি, জানতে চাইলে আছিয়া খানম সুমি বলেন, 'ফলাফল পাওয়ার পর থেকে আমি খুবই মর্মাহত ছিলাম। তবে নির্বাচন কমিশনে কারচুপির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

জেলা পরিষদের ১ নম্বর সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সদর উপজেলা, বন্দর উপজেলা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯৯ জন জনপ্রতিনিধি ভোটার ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

8h ago