গুলি করে হত্যা করলেও সমাবেশে মানুষ আসবে: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত ৮ অক্টোবর থেকে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ শুরু করেছে। এরই মধ্যে তারা চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ করেছে এবং আগামী ২২ অক্টোবর খুলনায় সমাবেশ করবে।

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, বিএনপির এসব সমাবেশে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং বিএনপির অভিযোগ, সরকার এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই ২২ অক্টোবর খুলনার সমাবেশ নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

দ্য ডেইলি স্টার: সরকার বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, এমন অভিযোগ কেন করছেন? বিএনপি তো সব জায়গাতেই সমাবেশ করতে পারছে। তাহলে অভিযোগ কেন করছেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আগামী ২২ অক্টোবর খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাস মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২ দিন বাস বন্ধ রাখবে। এটা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। বাস আর ট্রাকেই তো আমাদের লোকজন আসবেন। সেখানে বাস বন্ধ করা হয়েছে সরকারের ইন্ধনেই।

ইদানীং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দলটির নেতারা যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে না। তারা যে রকমের হুমকি দিচ্ছেন, তা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা।

আমরা সাংবিধানিক অধিকারের জন্যই সমাবেশ করছি। এখন পর্যন্ত আপনারা দেখছেন যে আমরা কতটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। ময়মনসিংহে আমাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। আশা করব তারা এই ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে আসবে এবং আমাদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দেবে।

ডেইলি স্টার: সেই সুযোগ তো দিচ্ছে। আপনারা সমাবেশ তো করতে পারছেন।

মির্জা ফখরুল: বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের তৈরি করা শত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সমাবেশ করছে। এর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সমাবেশ করতে গিয়ে জীবন দিয়ে আমাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়া গুলি করে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে খুলনায় আপনারা বড় সমাবেশ করতে পারবেন বলে মনে করছেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা আশা করছি পারবো। খুলনায় বড় সমাবেশ করার ব্যাপারে আমাদের সংগঠকরা আশাবাদী, নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত।

ডেইলি স্টার: পরিবহন বন্ধ থাকলে…

মির্জা ফখরুল: বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাতে আমরা সমাবেশ করতে না পারি, আমাদের লোকজন যাতে সমাবেশে আসতে না পারে। পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, সরকারের এসব অপকৌশল কোনো কাজে আসবে না। ময়মনসিংহেও বাস-ট্রাক সব বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখানেও নৌকায়, হেঁটে, অটোরিকশায়, সাইকেলে, রিকশায় মানুষ এসেছে। খুলনায়ও আসবে।

ডেইলি স্টার: সরকার এই প্রতিবন্ধকতা কেন তৈরি করছে এবং এই সমাবেশ করে আপনারা কী অর্জন করতে চান?

মির্জা ফখরুল: আমি সরাসরি যেটা বুঝি, সরকার অত্যন্ত নার্ভাস। কারণ, তারা তো জনবিচ্ছিন্ন। এই ধরনের বড় সমাবেশ তারাও তো করার চেষ্টা করতে পারে। সেটা না করে তারা আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। বলা যেতে পারে, তারা কিছুটা আতঙ্কে ভুগছে।

এই সমাবেশগুলো করে আমরা ইতোমধ্যেই জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সমর্থন অর্জন করেছি। জনগণের মধ্যে সাহস বাড়ছে। আওয়ামী লীগ যে ভয়-ভীতি তৈরি করে রেখেছে, সেখান থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে। প্রতিবাদ করার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

এই সমাবেশ থেকে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মনে আশা সৃষ্টি করা যাচ্ছে যে, এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে একটি অর্থবহ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার চেষ্টা করছি।

ডেইলি স্টার: সরকার কেন আতঙ্কে ভুগবে? সবকিছু তাদের হাতে, তারাই তো নিয়ন্ত্রণ করছে?

মির্জা ফখরুল: সব তারা নিয়ন্ত্রণ করলেও এ দেশে জনগণের অভ্যুত্থান তো ঘটেছে অনেক। জনগণের অভ্যুত্থান ঘটলে সেটা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসে সেটাই আছে।

ডেইলি স্টার: সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বিশৃঙ্খলা করলে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে। প্রতিটি ঘটনার পরেই আমরা দেখছি বিএনপির নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করে মামলা করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল: গত ১৪ বছর ধরে অজ্ঞাত হাজারো মানুষের নামে মামলা, নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। একটি মামলাও শেষ হয়নি, সব চলছে। আমরা সেগুলো ফেস করছি।

এই সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা নির্বাচিত না, তারা জনবিচ্ছিন্ন। আওয়ামী লীগের বডি সিস্টেমে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। সেখানে থকে তারা বের হতে পারে না। আমরাই মালিক, আমরাই রাজা, তোমরা সবাই প্রজা — সবসময় এই রকম একটা ভাব নিয়ে থাকে তারা। অন্য কেউ কিছু করতে পারবে না, প্রতিবাদ করতে পারবে না। দেখেন, তাদের নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ সবার মধ্যে প্রচণ্ড রকমের দাম্ভিকতা স্পষ্ট। এরকম ভাব নিয়েই তারা দেশ চালাচ্ছেন। এটা নতুন না, আগে থেকেই। তাদের মধ্যে সহনশীলতা বলতে কিছুই নেই।

ডেইলি স্টার: পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে না। যাদের নামে মামলা আছে, যারা অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে বা গ্রেপ্তার করছে।

মির্জা ফখরুল: এই মামলাগুলো কোন মামলা? এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। ময়মনসিংহে হামলা করল তারা, গুলি চালাল তারা, ককটেল মারল তারা, সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করল তারা, আর মামলা করে দিলো আমাদের ছেলেদের বিরদ্ধে। মুন্সিগঞ্জে গুলি করে আমাদের ছেলেদের মেরে ফেলল, তারপর পাল্টা মামলা করল আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধেই। মামলার আসামিদের মধ্যে অনেকে দেশেও ছিলেন না। গাজীপুরে আমাদের আহ্বায়ক সোহরাব হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন, তাকে লোয়ার কোর্টে আটকে দিলো। অথচ ঘটনার সময় সে দেশের বাইরে ছিল।

এগুলো তো আজকের সমস্যা না। এগুলো আমরা ফেস করছি ১৪-১৫ বছর ধরে। এইগুলোই আওয়ামী লীগের অস্ত্র।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনের আগে আপনাদের সমাবেশ বা প্রতিবাদ যদি বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে কি আরও বড় প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছেন?

মির্জা ফখরুল: প্রতিবন্ধকতা হবেই, সেটা আমরা জানি। কিন্তু এবার জনগণও অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সব প্রতিবন্ধকতা পার করে জনগণ এই সরকারের পতন এবার অবশ্যই ঘটাবে।

ডেইলি স্টার: খুলনার সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা কি আতঙ্কে আছেন গ্রেপ্তার ও মামলার ভয়ে?

মির্জা ফখরুল: সরকারের এই ভয় দেখানোর ভয়ে এখন আর আমাদের নেতাকর্মীরা ভীত না। তারা সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে ভয়ের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। গুলি করে হত্যা করলেও সমাবেশে মানুষ আসবে।

এখন তারা জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রারম ঝাপিয়ে পড়ছে। খুলনার সমাবেশ সফল করে তারা সেই প্রমাণ দেবেন।

আমরা চাই জনগণ সেখানে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করুক। জনগণের কাছে আহ্বান জানাই, তারা যেন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য এই সমাবেশে যোগ দেন।

অন্যদিকে সরকারকেও বলতে চাই, এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। এটা তাদের সাহায্য করবে না, বরং ক্ষতি করবে। তাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

40m ago