‘সরকার নির্বাচন-নির্বাচন খেলবে, কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারবে না’

গণসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, 'এ দেশের জনতা যখন জেগে উঠবে, তখন এ সরকারের হম্বিতম্বি আর টিকবে না। সরকার জনগণকে হুমকি দিচ্ছে। তারা ভয় পেয়ে গেছে। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।'
গণসংহতি আন্দোলনের আত্মপ্রকাশের ৭ বছর উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ছবি: সিরাজুল ইসলাম রুবেল/স্টার

গণসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, 'এ দেশের জনতা যখন জেগে উঠবে, তখন এ সরকারের হম্বিতম্বি আর টিকবে না। সরকার জনগণকে হুমকি দিচ্ছে। তারা ভয় পেয়ে গেছে। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।'

আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের ৭ বছর উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন।

সমাবেশের শ্লোগান ছিল 'সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের লড়াই জোরদার করুন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে জনগণের বৃ্হত্তর ঐক্য গড়ে তুলুন'।

সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ) শুধু জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়নি, তাদের দলের সদস্যদেরও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের নৈতিক পরাজয় হয়েছে।'       

তিনি বলেন, 'আমরা এ দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করছি। আমরা এ দেশে নাগরিক অধিকারের জন্য লড়ছি। আর এ সরকার (আওয়ামী লীগ) কী করছে? তারা ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ কায়েম করছে। এটাই নাকি স্থায়ীভাবে চলবে।'

'তারা নির্বাচন-নির্বাচন খেলা করবে। সবাইকে বলবে আসেন, নির্বাচন করি। আমরা ইভিএম এনেছি, স্বচ্ছ ব্যালট এনেছি। তারপর সব কিছু চলবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন আপনি আর ভোট দিতে পারবেন না। এ সরকার নির্বাচন-নির্বাচন খেলা করবে। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার থাকবে না,' বলেন জোনায়েদ সাকি।

তিনি আরও বলেন, 'উনারা ঠিক করবেন, কাকে কয়টি আসন দেবেন। এজন্য সরকারের সঙ্গে আপস করেন। এসব আসন বণ্টনের ক্ষমতা উনাদের রাখতে হবে। এটা যদি না মানেন, প্রধানমন্ত্রী বলবে, বাড়াবাড়ি করলে হেফাজতের দশা হবে। বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলখানায় ঢোকানো হবে। বাড়াবাড়ি করলে তাদের গুণ্ডাবাহিনী পথে পথে আটকাবে। এ হলো দেশের অবস্থা। এ অবস্থা যদি চলে, এ দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না।'

গণসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, 'মানুষের ভোটের অধিকার যে সরকার কেড়ে নেয় এবং সে প্রথা যদি স্থায়ী করে, সে দেশে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে রাষ্ট্রে নাগরিকের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সে দেশের রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব থাকবে না। আজকে দেশকে তারা এ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলছেন।'

'দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকে তারা লুটপাট করে, বিদেশে পাচার করছে। পাঁচ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছে। বিভিন্ন দেশে তারা সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। কোনো কোনো দেশে নাকি একেকটি জেলা কিনে ফেলেছে। একদিন না একদিন, তাদের বিপদে পড়তে হবে। ওই ভয়ে বিদেশে যেন আশ্রয় নিতে পারে, সেজন্য আগেভাগে সব ব্যবস্থা করে রাখছে। যদি এবারও টিকে যায়, তাহলে এ দেশকে লুটেপুটে পোটলা বানিয়ে দেবে,' যোগ করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, 'তারা শ্রীলঙ্কার প্রাসাদ বানিয়ে দেবে দেশকে। আর মানুষকে হুমকি দিচ্ছে যে, কাউকে জেলে পাঠিয়ে দেবে, কাউকে গুম করবে কিংবা পুলিশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করবে। দেশের মানুষকে বুঝতে হবে যে, এ সরকারের কাছে দেশ নিরাপদ নয়। সে কারণে আমাদের সম্মিলিতভাবে লড়তে হবে।'

'১৯৭২ সালের আজকের দিনে সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সংবিধান একটি রাষ্ট্রের ভিত্তি। কারণ রাষ্ট্র কী নিয়মে চলবে, তা সংবিধানে আছে। আর সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৫০ বছর পরে আমরা কী দেখলাম? দেখলাম যে, দেশকে একটি ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। দেখলাম যেই ক্ষমতায় যায়, তারাই জনগণকে ঠকিয়ে তাদের ওপর স্টিম রোলার চালায়,' যোগ করেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল।

Comments