ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়: শেখ হাসিনা
২০১৩ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে পেট্রল বোমায় পুড়ে হতাহতদের স্মরণ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি শুধু দেশবাসীকে এটুকুই বলবো, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত 'অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি বারবার আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, অনেক সংগ্রামের পর যখন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলাম, আমরা রাষ্ট্রপরিচালনা শুরু করেছিলাম মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে কাজ করতে। তখনই সরকার উৎখাতের নামে যে অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, সে ২০০১ সালে শুরু আবার ২০১৩-১৪-১৫...বারবার!
কীভাবে মানুষ পারে একটা গাড়িতে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলো সেখানে আগুন ধরিয়ে মানুষকে হত্যা করা। কীভাবে মানুষ এভাবে মানুষের ক্ষতি করে? এটাই নাকি আন্দোলন। এই আন্দোলন তো আমরা কখনো দেখিনি...আন্দোলন তো সেই স্কুলজীবন থেকেই আমরা দেখেছি। প্রত্যেকটা মিলিটারি ডিকেটেটরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরিক হয়েছি। সেই আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছে; কই আমরা তো এ কথা স্বপ্নেও ভাবিনি যে, পেট্রোল বোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসংযোগ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে সেটা আন্দোলন করা হবে। বিএনপির ঘোষণা দিলো অবরোধ এবং হরতাল কিন্তু কাজ হলো মানুষ হত্যা করা, বলেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোটের ডাকা আন্দোলনকালে দগ্ধ হয়ে নিহতদের স্বজন এবং আহতদের অনেকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে যারা এখানে উপস্থিত; এ তো খুব সামান্য...একমাত্র '১৩ তেই তো প্রায় ৩ হাজার ৬০০-এর মতো মানুষকে তারা পেট্রোল বোমা মেরে আহত করেছে, ১৪-১৫ তে করেছে। আর গাড়িগুলো পুড়িয়ে তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছিল। এই আন্দোলন কী রকম আন্দোলন এটা আমি জানি না। মানুষের জন্য আন্দোলন করতে হলে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, মানবাধিকার রক্ষা করতে হলে তো মানুষকে নিয়েই তো আন্দোলন করবে। আর তারা আক্রমণ চালিয়েছে, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের অজস্র নেতা-কর্মীদের হত্যা, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার, বাড়ি দখল, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়ো করে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, আবার তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে দিনের পর দিন অত্যাচার। এ রকম অত্যাচারের শিকার আমরা হয়েছি।
তারপর ২০০৮-এ যখন আমরা সরকার গঠন করলাম ২০১৩ থেকে তাদের আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করা শুরু হলো। প্রায় ৫০০ মানুষ শুধু আগুনে পুড়ে মারা গেছে। সাড়ে ৩ হাজারের উপর মানুষ আহত হয়েছে। আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যতটুকু পেরেছি, করেছি। যে মানুষগুলো আপনজন হারিয়েছে, তাদের সে ব্যথা-কষ্ট সেটা তো দূর করা সম্ভব না। সেটা তো আমি বুঝি। যারা আগুনে পুড়েছে কী অবস্থা একেক জনের! এক একজনের জীবনে কত স্বপ্ন ছিল, কত আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো একে একে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে, একে একে পুড়ে সব ধ্বংস। আমি শুধু দেশবাসীকে এটুকুই বলবো, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়—বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে, মাদক-অর্থ দিয়ে বিপথে ঠেলে দিয়েছে। পঁচাত্তরের পর থেকে এই চলছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ আসার পরে না আমরা কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি। শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা, উৎপাদন বৃদ্ধি, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতটুকু সম্ভব আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি। যেটুকু কাজ আমরা করে যাচ্ছি, মানবকল্যাণে। তার মধ্যে এ ধরনের আঘাত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আজকে বিচার...এদের নিজেদের বিচার নিজেদেরই হচ্ছে। বিচার হবেই, বিচার এটা বোধ হয় আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। বিচার তো হয়েছে, হয়তো প্রত্যেক কেইসে বিচার চলছে না কিন্তু যারা এ ধরনের অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, বিচার কাজ চলছে, অনেকে শাস্তি পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও পাবে।
কিন্তু যারা হুকুমদাত্রী বা হুকুমদাতা, তাদের কথা আপনারা ভেবে দেখেন। আর এরাই আবার...জানি না মানুষ এদের পাশে কীভাবে দাঁড়ায়, কীভাবে সমর্থন করতে পারে যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে আর মানুষকে কষ্ট দিতে পারে। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমার একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসীর কাছে, কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় সুষ্ঠু রাজনীতি করুক, আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু আমার এই সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নেই। এটা সহ্য করা যায় না, এটা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না, বলেন তিনি।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলবো, এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর কেউ না ঘটাতে পারে। দল-মত নির্বিশেষে, যেই হোক, এ দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে নিজের জীবন-জীবিকা করার অধিকার আছে। প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব, আমরা সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
Comments