যেভাবে এত বড় গণসমাবেশ আয়োজন করলো বিএনপি
পরিবহন ধর্মঘট, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে বরিশালে বড় জনসমাবেশ করেছে বিএনপি। এর আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও একই ধরনের বাধা ছিল। চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডের সমাবেশের পর ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে সমাবেশের ২ দিন আগে থেকেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২ দিন বরিশাল কার্যত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যে ট্রলার, বিভিন্ন ধরনের নৌযান, বাইসাইকেল, এমনকি হেঁটে আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে অসংখ্য নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশে লোক সমাগম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। সমাবেশস্থল ঘিরে ৩-৪ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত এলাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের বাইরে বান্দ রোড, ত্রিশ গোডাউন, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, জিলা স্কুল মোড়, কাকলীর মোড় পর্যন্ত এলাকা সমাবেশের আওতায় চলে আসে।
সমাবেশে কত মানুষ এসেছেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও, অনেকে বলেছেন সম্প্রতি এত বড়ো সমাবেশ আর হয়নি। বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস, শাজাহান ওমর বীর উত্তম এমনই মন্তব্য করেছেন।
গত ৫ নভেম্বর বিএনপি নেতা শাজাহান ওমর বলেন, 'আমি ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের সময় এখানে সমাবেশে এসেছিলাম। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে, ১৯৯২ সালে বিএনপির জনসভায় এসেছিলাম। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গেছে আজকের জনসভা।'
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বিভাগীয় জনসভাগুলোর মধ্যে বরিশালের জনসভাকেই বৃহত্তম বলেছেন। বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের মতে বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে এটাই ছিল বৃহত্তম।
বরিশালে যে উদ্যানে সমাবেশ হয়েছে তার নাম ছিল বেলস পার্ক। ১৮৯৬ সালে এনডি বিটসন বেল জেলার কালেক্টর হিসেবে ৯ দশমিক ৪৭ একরের এই মাঠটি তৈরি করেন। স্থানীয় ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিনের মতে, রাজা পঞ্চম জর্জের বরিশালে আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে এই মাঠটি তৈরি করা হয়। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত এখানে আসেনি। এরপর থেকে এই উদ্যানটি বেলস পার্ক হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই জায়গার নাম বদলে বঙ্গবন্ধু উদ্যান করা হয়। বঙ্গবন্ধু এখানে ১৯৭৩ সালে ভাষণ দেন বলে এই নাম রাখার কথা জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।
বরিশালে বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূল মঞ্চ ফাঁকা রাখতে বলেছিল জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্য সেখানে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীতে উদ্যান ভরে যাওয়ায় অনেক নেতা-কর্মী প্রশাসনের তৈরি মঞ্চ ও ছাউনিতেও অবস্থান নেন।
সমাবেশে যোগ দিতে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের বাধার আশঙ্কায় গত বুধবার থেকেই আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন সমাবেশস্থলে আসেন। সেখানে ৩ দিন ধরে ছিলেন তারা। এরপর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে হাজারো নেতা-কর্মী সেখানে ভিড় করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের জনসভায় যোগ দিতে ৩ দিন অবস্থান করায় ধন্যবাদ জানান।
পটুয়াখালী জেলার বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে সমাবেশে এসেছিলেন মিরাজ বয়াতি। জনসভায় আসতে তার পুরো দিন লেগেছে। সমাবেশস্থলে ছিলেন ৩ দিন।
মেহেন্দীগঞ্জের কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা থেকে শতাধিক ট্রলারে ২০ হাজারের বেশি মানুষ এসেছেন। শুধু মেহেন্দীগঞ্জই নয়, হিজলা, মঠবাড়িয়া, কলাপাড়া ও ভোলা থেকে নৌপথে ট্রলার নিয়ে হাজারো মানুষ এসেছেন। সমাবেশে যত লোক হয়েছে তার প্রায় অর্ধেক মানুষ এসেছেন এই এলাকাগুলো থেকে। ভোলা থেকে একটি লঞ্চে প্রায় ৩ হাজার নেতা-কর্মী এসেছেন। নিয়মিত রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ বন্ধ থাকার পরও শেষ পর্যন্ত মানুষ নৌপথেই এই সমাবেশে এসেছেন।'
পিরোজপুর থেকে আসা যুবক ফরিদ জানান, তারা হাজারখানেক মানুষ চাল-ডাল নিয়ে ট্রলারে এসেছেন। ট্রলারেও রান্নার ব্যবস্থা ছিল। বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই রান্নার ব্যবস্থা করে খেয়েছেন সমাবেশের আগের সময়টা। আমতলী, চরফ্যাশন ও বরগুনা থেকেও হাজারো মানুষ মাঠেই রান্নার ব্যবস্থা করছেন। এভাবে জনসভাস্থলে একদিন আগেও সব সময়ের জন্য ২৫-৩০ হাজার মানুষ ছিলেন। আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এভাবেই বড় সমাবেশ করল বিএনপি।
Comments