সরকার হটাতে ন্যূনতম দফার যৌথ ঘোষণা আসছে: মির্জা ফখরুল

সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলন আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলন আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি।

আজ শুক্রবার গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।

তিনি বলেন, 'আজকের সভায় আমরা এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি, সেই আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির নেওয়া আগের কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করেছি এবং পরবর্তীতে কী কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে, সে বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।'

'আমরা জনগণকে আহ্বান জানাতে চাই যে, এই আন্দোলনে তারা সবাই যেন শরিক হন। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা যেন আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, সে ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি', যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল জানান, চলমান যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত অন্যান্য জোট ও দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপি এরকম পর্যালোচনামূলক আলোচনা করবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'একটা ধারাবাহিক আলোচনা আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে যে কর্মসূচি সেটা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। সেই আলোচনা আজকে আমরা কিছুটা করেছি। যতদূর সম্ভব এই কর্মসূচিটা স্বয়ংসম্পূর্ণ করে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে পেশ করার জন্য আমরা কাজ করছি। খুব শিগগির এটাতে সফল হয়ে যাব বলে আশা করি।'

'আমরা ৪টি কর্মসূচি করেছি যুগপৎভাবে। আমরা এই কর্মসূচিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাই এবং যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিজয়ের জায়গায় পৌঁছাতে চাই। কী রকম করে এটা করা যেতে পারে, এর ওপর আমরা নীতিগত ও কৌশলগত বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং সেই আলোচনার মধ্যে আমরা স্থির করেছি যে, আমাদের সঙ্গে যেসব সহযোগী সংগঠন আছে বা অন্যান্য সামাজিক সংগঠনে আছে, যারা এই আন্দোলনে আছে, হয়ত এখনো একসঙ্গে হয়নি, জোটবদ্ধ হয়নি কিংবা আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, ছাত্রসংগঠন বলেন, নারী সংগঠন বলেন, যুব সংগঠন... তাদের সবাইকে নিয়ে যাতে আন্দোলনের মধ্যে যাওয়া যায়, সেই উদ্যোগের কথা বলেছি। মূল স্পিরিটটা হচ্ছে ঐক্যকে আরও দৃঢ় করা', বলেন তিনি।

মান্না বলেন, 'আমরা ঢাকা মহানগরে তৎপরতা যাতে বাড়ানো যায়, সে কথা বলেছি। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ দেখেছি যে, বিএনপি মহানগর ঢাকায় কয়েকটা প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, প্রোগ্রামটা কার্যকর হতে পারে।'

'আমরা এটাকে সমর্থন করেছি। ভালো কর্মসূচি হয়েছে। এটার মধ্যে দিয়ে আমরা সামগ্রিকভাবে সেই প্রোগ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করব, যাতে একটা অভ্যুত্থানের দিকে আমরা ধীরে ধীরে যেতে পারি। আমরা আশাবাদী, আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, মানুষের কাছে সমর্থন আমাদের প্রতি আগের মতোই ব্যাপক অকুণ্ঠ আছে এবং আমরা বিজয়ের দিকে যাব', যোগ করেন তিনি।

ন্যূনতম দফার যৌথ ঘোষণা আসছে

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ন্যুনতম দফা নির্ধারণে আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, আলোচনা চলছে। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যুনতম দফার বিষয়টা একটা যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে অচিরেই আপনাদের কাছে আসবে।'

এদিকে, 'বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে' আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের এমন বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আপনারা (সাংবাদিকরা) এতদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন, কখনো গুনাক্ষরে কারও কাছ থেকে শুনেছেন এ ধরনের কথা। উনি (শেখ সেলিম) এটা তৈরি করে ফেললেন, আর এটা হয়ে গেল। সেটাই আপনারা বলছেন।'

'এটা একেবারে পুরোপুরিভাবে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট একটা কথা। এটা বেইসলেস', বলেন তিনি।

বিকেল ৪টায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সভা হয়। চলে ২ ঘণ্টারও বেশি।

বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বৈঠকে অংশ নেন।

Comments