আ. লীগের বাম শরিকেরা জোটে আর কোনো ইসলামি দল চায় না

‘মোশাররফ হোসেনের ছেলে কেন প্রার্থী হবেন? আমাকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হবে না?’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দল যুক্ত করার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জোটের বামপন্থী দলগুলো।

এমনকি গতকাল সোমবার জোটের শরিক ইসলামি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনও নতুন কোনো ইসলামি দলকে জোটে নেওয়ার বিরোধিতা করেছে।

রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় এক বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে ছিলেন এমন একটি সূত্র জানায়, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ক্ষমতাসীন দলের একতরফা নির্বাচনী প্রচারণা, শুধুমাত্র 'নৌকা'র জন্য ভোট চাওয়া এবং তৃণমূলে জোটকে কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জোটের শরিকরা।

ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের প্রতিনিধিরা জোটে কোনো ইসলামি দল অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তাদের আপত্তি প্রকাশ করেছেন।

জবাবে আমু তাদের আশ্বস্ত করেন, সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে গঠিত এই জোটে কোনো ইসলামি দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

তিনি অঙ্গীকার করেন, ১৪ দলীয় জোট অটুট থাকবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেছেন, যে দলগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার জন্য যোগাযোগ করেছে, সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ওইসব রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ ১৪ দলীয় জোটের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে জোট করা সম্ভব নয়।

এর উত্তরে আমু বলেছেন, ইসলামপন্থী যে দলগুলো ইতোমধ্যে ১৪ দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তারা একটি পৃথক জোট গঠন করতে পারে এবং সেটি আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করার বিষয়ে মেনন তার আপত্তি জানান।

তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে এবং "নৌকা" প্রতীকের জন্য ভোট চাইছে। তাহলে আমরা কোথায়? আমাদেরও কি নিজেদের মতো করে প্রচারণা শুরু করা উচিত? আমাদের নির্বাচনী প্রতীকে ভোট চাওয়া শুরু করা উচিত?'

আমু উত্তরে বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়েই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করে আসন ভাগাভাগি করা হবে।

বৈঠকের একটি সূত্র আমুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, 'আগামী জাতীয় নির্বাচনের এখনো ৮ মাস বাকি রয়েছে। কাজেই সবকিছু চূড়ান্ত করতে অনেক সময় বাকি আছে।'

বৈঠকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া জানান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার ছেলে প্রার্থী হবেন।

তিনি বলেন, 'মোশাররফ হোসেনের ছেলে কেন প্রার্থী হবেন? আমাকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হবে না?'

জবাবে আমু বলেন, 'আপনাকে মন্ত্রী করা হয়েছে। জোটের সবাইকে তো খুশি করতে হবে।'

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার বলেন, দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, 'মানুষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গল্প শুনতে চায় না। সার্বিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।'

বৈঠক শেষে আমু সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দলীয় জোটে কোনো ইসলামি দল অন্তর্ভুক্ত হবে না।

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে এই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, 'বিএনপি অংশগ্রহণ করুক বা না করুক, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।'

Comments