যারা দেশের প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা জানি যে, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন তারা কিছুই চোখে দেখে না। আর আকেটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে যেয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা।’
শেখ হাসিনা
বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা জানি যে, দেশবিরোধী কিছু শক্তি আছে যারা বাংলাদেশ যত ভালো কাজই করুক না কেন তারা কিছুই চোখে দেখে না। আর আকেটা শ্রেণি আছে, তাদের অভ্যাসটাই হলো বিদেশিদের কাছে যেয়ে বাংলাদেশের বদনাম করা।'

র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'যারা এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কেন কোন উদ্দেশ্যে করছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।'

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ফোর্সেস-এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার সকালে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এই কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এই বদনাম করে বোধ হয় তারা কিছু সুবিধা পায়। কিছু আর্থিক সুবিধাও পায় বা অন্যান্য সুবিধা...কিছু একটা পায় তারা। কাজেই এই বদনাম করে করে তারা...যারা আমাদের খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে, সফলতার সঙ্গে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে যেন আগে বদনাম করে ফেলে। বাংলাদেশের কোনো উন্নতি তো তাদের চোখেই পড়ে না।'

'আমি বলবো, এই ক্ষেত্রে কারো মনোকষ্ট হওয়া উচিত না। আমরা জানি কিছু দিন আগে একটি দেশ যেহেতু র‌্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ এটা আমাদের দেশ। আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে তারা কে কী করে-না করে সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি সরকারে আছি, আমি একটা কথা বলতে পারি, কে ভালো করল, কে মন্দ করল সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না কিন্তু বাংলাদেশ করে। যে কোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়। আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস আছে। কাজেই আমরা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবো। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলবো। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'নিজের আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু নীতি ঘোষণা দিয়েছি। কারণ ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে এই দেশটাকে একটি জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে তারা মিছিল করছে, তাদের হুমকি-ধামকি, মানুষ হত্যা, মানুষকে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলা, এমনকি আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা; নানা ধরনের ঘটনা আমরা দেখেছি।'

তিনি বলেন, 'জঙ্গিবাদ কখনো কোনো দেশের উন্নতি করতে পারে না। কাজেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমি এইটুকু বলবো, জঙ্গি দমনে র‌্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।'

মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অর্থনৈতিকভাবে যেমন সাবলম্বী হচ্ছি, উন্নতি হচ্ছি, পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে মাদকের প্রভাবে অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে অনেকেই। এটা খুব ধনী শ্রেণি থেকে নিম্ন শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ একটা পরিবারে যদি মাদকাসক্ত কেউ থাকে সেই পরিবারে কষ্টের সীমা থাকে না। এমনও দেখা গেছে, মাদকাসক্ত সন্তান বাবা-মাকে পর্যন্ত হত্যা করে ফেলে। এই ক্ষেত্রে মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান র‌্যাব চালাচ্ছে, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে যে কারণে আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দেশের একটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, রমজান মাস আসলেই যেন কিছু মানুষের মুনাফা করার একটা অভিলাস দেখা দেয়। অথচ রমজান আমাদের কৃচ্ছতার মাস। সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে দেখি উল্টো কাজ আমাদের দেশে হয়। আরেকটা হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া। নকল প্রসাধনী তৈরি করা, নকল খাবার তৈরি করা; এই বিষয়গুলো ওপরও র‌্যাব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। জাল মুদ্রা ছাপানো, মানুষকে ধোঁকা দেওয়া—এগুলোতে জনগণের ক্ষতি হয়, দেশের ক্ষতি হয়।'

মানুষের সেবায় সব সময় র‌্যাব অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সেই সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্য সৃষ্ট যে দুর্যোগ; আমরা দেখেছি ভুক্তভোগী মানুষের দুর্দশা। অগ্নিসন্ত্রাসের ফলে বহু মানুষ নিজের জীবন হারিয়েছে অথবা যারা সেই পোড়া শরীর নিয়ে বেঁচে আছে, মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে অনেকে বেঁচে আছে। অগ্নিসন্ত্রাস দমনে বা বিভিন্ন ঘটনায় র‌্যাব বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা জানি, এই বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পর থেকে ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা মানুষকে কী দিতে পেরেছে। আওয়ামী ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন চলছে।'

'আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের কাছে এলিট ফোর্স র‌্যাব আজকে শান্তি, নিরাপত্তা, আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'কিছু লোক তো থাকবেই সব সময় বিরোধিতা করতে। আর মাঝে মাঝে কিছু উল্টোপাল্টা কথাও বলবে, ওগুলো কানে না নিয়ে, নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে আমরা আমাদের দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কি না, সঠিক পথে আছি কি না এই চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আত্মমর্যাদা বোধ নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে যাই, অবশ্যই বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না।'

Comments