যেখানে কোনো মেয়রের মেয়াদ শেষ হয় না

‘নির্বাচিত মেয়ররা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের হোক বা বিএনপির, কোনো মেয়রই তার ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের হোক বা বিএনপির, কোনো মেয়রই তার ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

২০১৩ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে সিটি করপোরেশনটি বেশকিছু দিন পরিচালিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে।

গাজীপুরের সুশীল সমাজের সদস্যরা বলছেন, নগরীর দরিদ্র মানুষের সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার পেছনে নির্বাচিত মেয়রের অনুপস্থিতি আংশিকভাবে দায়ী।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট দায়িত্ব নেন প্রবীণ বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান। কিন্তু, ২ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকেন। এরপর পুনরায় দায়িত্ব বুঝে নেন মান্নান।

মাঝের এই সময়টাতে মান্নান হয় কারাগারে ছিলেন কিংবা বরখাস্ত হয়ে কাটিয়েছেন। পুনরায় দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়র হিসেবে মেয়াদকালের বাকি সময়টাতে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসী আশা করেছিলেন যে তিনি তার মেয়াদ শেষ করতে পারবেন।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে

এই সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।

গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, 'নির্বাচিত মেয়ররা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।'

গতকাল শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এটি দুর্ভাগ্যজনক যে নগরবাসী মেয়রদের কাছ থেকে যে উন্নয়ন আশা করেছিল, তা পায়নি।'

৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটিতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস।

নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় ১০ বছর পার হয়ে গেলেও নাগরিক সুবিধার কোনো উন্নতি হয়নি।

জয়দেবপুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কারো দায়িত্ব পালনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ভারপ্রাপ্ত কেউ দায়িত্ব পালন করলে সেখানকার নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।'

গাজীপুর সুজনের সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, 'কোনো সিটি করপোরেশন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের মাধ্যমে পরিচালিত হবে, এটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। এতে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম সিটি করপোরেশনের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এই প্রথার অবসান হওয়া উচিত। আমরা আর দেখতে চাই না যে কোনো ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব পালন করছেন।'

 

Comments