জামায়াতের রাজনীতি ও সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে যা বললেন আইনমন্ত্রী

বিচার করার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি বলতে পারব না যে জামায়াত দোষী
আইনমন্ত্রী
বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জামায়াতকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে বিচার করার জন্য আইন সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলমান জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, 'সংশোধনের জন্য যে আইন সেটি কেবিনেটে কিছু দিনের মধ্যে যাবে।'

আজ রোববার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ল' রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই গণমাধ্যমকর্মী আইনমন্ত্রীকে জামায়াত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের বিচার প্রসঙ্গে জানতে চান।

গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, গতকাল জামায়াতে ইসলামী একটি সমাবেশ করেছে। নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে এবং উচ্চ আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন। এই অবস্থায় হঠাৎ ১০ বছর পরে জামায়াত মাঠে। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটি আঁতাত হয়েছিল। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, 'জামায়াতকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে বিচার করার জন্য আইন সংশোধন করার কথা আমি আগে বলেছি, সেই প্রক্রিয়া চলমান। সংশোধনের জন্য যে আইন সেটি কেবিনেটে কিছু দিনের মধ্যে যাবে।'

'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই (সমাবেশের) অনুমতি দিয়ে থাকে। উনারা কী বিবেচনায় দিয়েছেন আমার মনে হয় যে, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে আপনারা যদি প্রশ্ন করে সেটা বেটার হবে,' বলেন তিনি।

আপনারা একদিকে জামায়াতকে দল হিসেবে বিচারের জন্য আইন সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন, আরেক দিকে আপনারা এই দলটিকে রাজনীতি মাঠে নামার প্রায় ১০ বছর পর সুযোগ করে দিয়েছেন এবং ওই জায়গায় প্রায় ১ মাস থেকে বিরোধী দল একটি অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাদের সেখান থেকে সরিয়ে জামায়াতকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এটি একটি সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত কি না গণমাধ্যমকর্মীর এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না এটা সাংঘর্ষিক, তার কারণ হচ্ছে, বিচার করার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি বলতে পারব না যে জামায়াত দোষী। বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং বিচারের প্রক্রিয়ায় আমি আজকেই বলব না যে কী হবে।'

তিনি বলেন, 'অবশ্যই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে এই কারণে যে, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার করেছি সেখানে থেকে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, দেখা গেছে যে, জামায়তকে দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধে বিচার করার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে কিন্তু বিচার করার পরেই বলা যাবে তারা দোষী কি না। সেই জন্য আমি মনে করি না এটা সাংঘর্ষিক।'

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ বাতিল করেছে'—গণমাধ্যমকর্মীর এমন বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে কনসেপ্ট, এটা ধারণ করা হয়েছিল তার কারণ হচ্ছে, বিএনপি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে যতগুলো উপনির্বাচন হয়েছে সবগুলোতে ভোট চুরি এবং মামলার সব ইতিহাস আপনারা জানেন। সেই কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি অনুচ্ছেদ সংবিধানে ঢোকানো হয়েছিল।'

'হাইকোর্টে যখন এটা চ্যালেঞ্জ করা হয় তখন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রায়ে বলে দেন—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে অনুচ্ছেদ সংবিধানের ঢোকানো হয়েছিল সেটি সংবিধানসম্মত নয়, সংবিধানবিরোধী। এটি যখন আপিল বিভাগের যায়, তখন একই রায় হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অবৈধ ও সংবিধান বহির্ভূত বলা হয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাদ দেওয়া হয়,' বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, 'আপনারা বাতিল করে দিয়েছেন এই কথাটা ঠিক না। সর্বোচ্চ আদালত এটাকে সংবিধান পরিপন্থী, অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করার পরে যেটা সংসদকে করতে হয় জাতীয় সংসদ সেই দায়িত্ব পালন করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা সংবিধান থেকে বের করে দিয়েছে।'

'এখন একটা নির্বাচনকালীন সরকার; আপনারা ২০১৪ সালেও দেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী কেবিনেট রিশাফল করে যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে তিনি এ কথা বলেছেন, সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে সেসব রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে তিনি একটি ছোট সরকার করবেন। কারণ নির্বাচনের যখন তফশিল ঘোষণা করে দেওয়া হয়, তখন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যেসব সরকারি কাজ করতে হয় সেসব কাজ করেন আর সরকার নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করে। আজকে বিশ্ববাজারের যে অবস্থা সেখানে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সবার যেন প্রতিনিধিত্ব থাকে সবাই যেন দেখতে পারে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিল সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করবে—নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন করার জন্য সবার সহায়তা দরকার,' বলেন আইনমন্ত্রী।

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

7h ago