ভাঙা নৌকায় মানুষ আর উঠবে না: মির্জা ফখরুল
সংকট উত্তরণে সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলের আগে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'কথা খুব পরিষ্কার… অবিলম্বে পদত্যাগ করেন এবং সংসদ বিলুপ্ত করেন। যত দিন যাবে, ততই দেশের ক্ষতি হবে, মানুষের ক্ষতি হবে, ততই গণতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে।'
'তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার যে নামেই বলেন না কেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা দেন, তারা নতুন নির্বাচন কমিশন করে নির্বাচন করবে…. এটাই একমাত্র পথ, আর কোনো পথ নাই। সুতরাং যত দ্রুত পারেন ওই জায়গায় যান। তা না হলে সালাম (আবদুস সালাম) সাহেব যেটা বলেছেন, তখন পালাবারও পথ খুঁজে পাবেন না। কারণ এর আগে বলেছি, সময় আর নাই, সময় শেষ হয়ে গেছে', বলেন তিনি।
সরকার পতনের চলমান আন্দোলনে 'জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে' বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।
দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের শুধু এরকম খালিদ হোসেন জ্যাকি, মজনু (রফিকুল আলম মজুন,) মুন্না (আবদুল মোনায়েম মুন্না), শাহীন (গোলাম মাওলা শাহীন) নয়… গত এক মাসে ৩৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাহলে বুঝতে পারছেন তারা কী করতে যাচ্ছে? সুতরাং প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।'
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সভাপতি খালিদ হোসেন জ্যাকিসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে ছাত্রদল ছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
নয়া পল্টনে থেকে মিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আজকে আমাদের বয়স হয়েছে, অসুস্থ শরীর নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও এখনো কারাগারে লড়াই করে চলেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব, তিনি বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদেরকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে এত ভয় পেয়েছে, এখন এজন্যে ২০১৪ সালে যে কাজ করেছিল, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করেছে… এখনো আটকাবস্থায় তিনি আছেন। সেদিনও গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে দিয়েছিলো। আজকে আবার অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে… নৌকায় ভোট দেন, নৌকায় ভোট দেন বলে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ বলছে, আগে জানলে ভাঙা নৌকায় উঠতাম না। এই ভাঙা নৌকায় মানুষ আর উঠবে না।'
'অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। সেই নির্বাচনে তারা ভোট দিতে চায়। সেই নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, হাসিনা সরকার থাকলে এবং তার সরকার থাকলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু-অবাধ-গ্রহণযোগ্য হবে না।'
তিনি বলেন, 'এখন আবার ফায়ার শুরু করছে। এরা পুলিশ ভাইদেরকে বদলি করে, এসপি বদলি করে, ডিআইজি বদলি করে, ইউএনও বদলি করে, ম্যাজিস্ট্রেট বদলি করে, ওসি বদলি করে— কোনটা তার নিজের সেটাও বুঝতে পারে না। সব নিজের লোক বুঝাতে চায়। এটাই হয়। যখন পতনের সময় আসে, তখন কেউ নিজের লোক থাকে না।'
কাঁচা মরিচের দাম বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'কাঁচা মরিচের কেজি হাজার টাকায় উঠেছে… তাই না। কাঁচা মরিচের খুব ঝাঁজ থাকে… এই ঝাঁজ আর এখন সহ্য করতে পারছেন না….। সারাদেশে মানুষ শান্তিপূর্ণ বলছে, আপনার আর প্রয়োজন নাই। গত ১৫ বছর ধরে আপনি আপনার দল নিয়ে যেভাবে শোষণ করেছেন, মানুষের সম্পত্তি লুট করে পাচার করেছেন, যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছেন…. আমাদের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, তাতে কি আন্দোলন ঠেকানো যাচ্ছে, ৬০০ মানুষকে গুম করেছে, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে? এই আন্দোলন মানুষের প্রাণের দাবি।'
'আজকে বিএনপিকে ক্ষমতা নেওয়ার জন্য নয়… দেশের মানুষ তার অধিকার ফিরে পেতে চায়। সেই অধিকারটা কী, ভোটের অধিকার, বাঁচার অধিকার, কথা বলার অধিকার, মানুষের সংগঠন করার অধিকার, এক হাজার টাকার কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় খাওয়ার অধিকার। শুধু কাঁচা মরিচ নয়, চাল-ডাল-তেল-লবণ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এই যে সমাবেশে রিকশাচালকরা এখানে দাঁড়িয়ে গেছে… তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তারা কেমন আছে? আমি আজকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আসুন দেখুন এই সাধারণ মানুষরা কী বলেন, দেখুন কৃষক ভাইয়েরা কী বলে।'
Comments