ধানের শীষ পেটের বিষ হয়ে গেছে: কাদের

আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, ধানের শীষ পেটের বিষ হয়ে গেছে
ওবায়দুল কাদের
আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

গুজব-গুঞ্জন-ষড়যন্ত্রে নির্বাচনী অঙ্গন সংঘাতময় করে তোলার চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভার আগে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নির্বাচন মানেই জাল ভোট, কেউ কেউ এটা মনে করেন এবং নির্বাচন মানেই ভোটকেন্দ্র দখল—এসব অপপ্রচারগুলোর বাস্তবে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটেনি। সেদিন থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে আমরা আশার আলো দেখতে পাই।'

এ সময় নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়নের আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন দলটির সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, গুজব ছড়ান, ষড়যন্ত্র করেন, তাদের এই বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন এই বিষয়গুলো আমাদের নজরে থাকা প্রয়োজন। আমাদের জানা দরকার নির্বাচন কাকে বলে, স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা কীভাবে হয়; এই বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের অজানা থাকলে চলবে না। অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে তো লাভ নেই!'

'বারবার তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে। আমরা তো বলছি, সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেভাবে হয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু-অবাধ, আগামী জাতীয় নির্বাচনও ঠিক এভাবেই সম্পন্ন হবে। এখানে সরকার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। শেখ হাসিনার সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন,' বলেন তিনি।

কাদের বলেন, 'আমাদের দুর্ভাগ্য, গুজবে-গুঞ্জনে-ষড়যন্ত্রে আজকে নির্বাচনী অঙ্গন ক্রমশ সংঘাতময় করে তোলার চক্রান্ত চলছে। কনফ্রনটেশন আমরা ডাকিনি, তারা কনফ্রনটেশনে উসকানি দিয়েছে-উসকানি দিচ্ছে। নির্বাচনের আর ৩-৪ মাস বাকি আছে, শিডিউল ডিক্লেয়ার হবে। এই মুহূর্তেও বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো গুজব আর ষড়যন্ত্র নিয়েই ব্যস্ত। তারা কিন্তু ভোটারদের কাছে যাচ্ছে না, তারা যাচ্ছে বিদেশিদের কাছে। কখন কোন প্রতিনিধি আসবে কোন দেশ থেকে, বাংলাদেশে এসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে; অনেক আশার মালা গেঁথে তারা তৈরি আছে। যে আটলান্টিকের ওপার থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা আসে! তারা তাকিয়ে আছে, কার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে! এসব বিষয়ে তারা নালিশ করেছে।'

'তারা ভাবছে কিছু দিনের মধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি যে, প্রতিনিধি দল আসছে বিভিন্ন দেশের। তারা এসেই সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে, ভিসানীতি আরোপ করবে, এসব নানা দুঃস্বপ্নে তারা বিভোর হয়ে আছে। তারা দিবাস্বপ্ন দেখছে,' বলেন তিনি।

বিদেশে বিএনপির অনেক প্রভু মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'প্রভুদের কাছে নালিশ করে মানুষ, বন্ধুর কাছে নালিশ করে না। পরামর্শ চাইতে পারে। আর পরামর্শ গায়ে পড়েও দিতে পারে। সব পরামর্শ আমাদের গ্রহণ করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই! আমাদের তো নির্বাচনী ব্যবস্থা আমাদের সংবিধান ঠিক করে দিয়েছে। সংবিধানের মধ্যে কোনো প্রকার ফাঁক-ফোকর নেই।'

'গতকাল সংসদের যে আইনটি পাস হয়েছে, আইনমন্ত্রী পাস করেছেন। এটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত, আইনসম্মত, ন্যায়সঙ্গত। ইলেকশনে একটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলো, দুটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলো, এই ১-২ কেন্দ্র বিশৃঙ্খলার জন্য বন্ধ হতে পারে কিন্তু গোটা নির্বাচন কেন বন্ধ হবে! এটা অযৌক্তিক। দুনিয়ার কোন গণতান্ত্রিক দেশে এটা আছে; যারা বলেন, তাদের আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই,' প্রশ্ন রাখেন কাদের।

তিনি আরও বলেন, 'এখানে এই আইনে সেই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও ব্যবস্থাটি ঠিক এ রকম। আমরা ভিন্নভাবে কিছু কেন চালু করতে যাব?'

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জের ধরে তিনি বলেন, 'ফখরুল সাহেব বলেন, ভাঙ্গা নৌকায় নাকি আর মানুষ চড়বে না। আমি ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, ধানের শীষ পেটের বিষ হয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ উন্নয়নের জন্য আবারও নৌকা চায়। পেটের বিষ আর গ্রহণ করবে না। আপনারা মনে মনে মন কলা খেতে থাকুন।'

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, 'আমি আশা করব, বিদেশি বন্ধুরা বন্ধুর মতোই থাকবেন। ক্ষমতার জন্য বিএনপির যে অপপ্রচার, তারা ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে, যেভাবে হোক ক্ষমতায় যেতে হবে! নির্বাচন তখনই সুষ্ঠু যখন তাদের জেতার গ্যারান্টি আছে। তার আগে নির্বাচন এ দেশের বিএনপির দৃষ্টিতে কখনো শুদ্ধ হবে না।'

আওয়ামী লীগ যদি কখনো বিরোধী দলে যায় তখন কি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, 'আওয়ামী লীগের কথা একটা, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সংবিধানকে ফলো করবে। সরকার থাকলে অথবা বিরোধী দলে থাকলে। চির জীবন আমরা সরকারে ছিলামও না, না-ও থাকতে পারি। বিরোধী দলে গেলেও আমরা সংবিধান মেনে চলব।'

Comments