কাফনের কাপড় পরে নরসিংদী ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের একাংশের বিক্ষোভ
নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাদের বিচার দাবিতে কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের একাংশ।
আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলখানা মোড়ে ঢাকা-সিলেট সড়ক অবরোধ ও পরে নরসিংদী আদালত প্রাঙ্গণের রাস্তায় বিক্ষোভ করে তারা।
এসময় তারা জেলা বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত নেতা জাহেদুল কবির ভূইয়ার ফাঁসিসহ জড়িত অন্যান্য নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আশ্রয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সিনিয়র সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূইয়া, বহিষ্কৃত কর্মী ফাহিম রাজ অভি ও নিহত সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাদেকুর রহমানের পরিবারের লোকজনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।
গতকাল রোববার দুই ছাত্রদল নেতা-কর্মী হত্যার ঘটনায় এজহারভুক্ত আসামি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহিদুল কবির ভূইয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৫ মে নরসিংদী শহরের অস্থায়ী কার্যালয়ের কাছে জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত আংশিক কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক (৩২) ও আশরাফুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হন।
সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদেকুর রহমান সাদেক মারা যান এবং পরের দিন সকালে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফুল ইসলাম।
এ ঘটনায় নিহত সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার অধিকাংশ আসামি স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। এছাড়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
গত ২৬ জানুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি, মাইনুদ্দিন ভূঁইয়াকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের (আংশিক) জেলা কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর থেকে ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পদ না পাওয়া সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা।
কমিটির ঘোষণার পর সেই রাতেই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটি আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনের বাসভবন ও জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটে।
পরদিন জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের কেয়ার টেয়ার কাজল মিয়া বাদী হয়ে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত ৩ জনসহ মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
একইদিনে খায়রুল কবির খোকনসহ ৯ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ তুলে থানায় পাল্টা লিখিত অভিযোগ দেন পদবঞ্চিত নেতা ফাহিম রাজ অভি।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি শিবপুর ইটাখলা মোড়ে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন ফাহিম রাজ অভি। পরে এটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, খায়রুল কবির খোকন তার ব্যক্তিগত লাইসেন্সকৃত অস্ত্র থেকে তাদের ওপর গুলি ছুড়েছেন। শিবপুর থানায় দায়ের করা সেই মামলায় খোকনসহ বিএনপির ১৮ নেতকর্মীকে আসামি করা হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া ও সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাহিম রাজ অভিকে ছাত্রদল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
নিহত দুই ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী সদর থানার উপ-পরিদর্শক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, 'বাদীর মামলার ভিত্তিতে এ পর্যন্ত আমরা ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আশ্রয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।'
Comments