ছাত্রদল নেতাদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে ‘অস্ত্র দিয়ে নাটক সাজানো হচ্ছে’: মির্জা ফখরুল
রাজধানীর আজিমপুর থেকে ছাত্রদল নেতাদের তুলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে 'অস্ত্র দিয়ে নাটক সাজানো হচ্ছে' বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা 'মিথ্যা' মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার তার পুরোনো কায়দায় গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীদের আহত করেছে।'
তিনি বলেন, 'ঢাকায় দেশব্যাপী ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছে। দলীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহম্মেদ রবিনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যা কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গত ১৮ আগস্ট ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে তার আজিমপুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়, এ খবর শোনার পর তার বাসার সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী আরিফ বিল্লাহ উপস্থিত হলে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আকস্মিকভাবে সেখানে হানা দিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তাদের পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে নাটক সাজিয়ে আবারও একইপথে অগ্রসর হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী পদযাত্রার কর্মসূচি চলাকালে গতকাল হবিগঞ্জে সরকারি বাহিনী তাণ্ডব চালিয়েছে, পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর নির্মমভাবে বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে। এসময় পৌর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল, জেলা যুবদল নেতা অলিউর রহমান, আমিন শাহ, সদর থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান কাজল, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহ রাজিব আহম্মেদ রিংগন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাহবুব, ছাত্রদল নেতা শেখ সাজিদুল হকসহ প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও যেতে বাধা প্রদান করেছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গউছের বাসভবনে আহত নেতাকর্মীরা আশ্রয় নিলে পুলিশ তার বাসভবনেও হামলা চালিয়ে প্রায় ২০-২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিকেল সাড়ে ৩টায় পদযাত্রা চলাকালে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী যৌথভাবে এই নারকীয় তাণ্ডব চালায়। পুলিশি হামলায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নানসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।'
'নেত্রকোণা জেলা বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালায়। এসময় জেলা ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব মিয়া, ছাত্রদল নেতা মো. রফিকুল ইসলাম রফিক, আমতলা ইউনিয়ন যুবদল নেতা বজলুর রাশেদ, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রায়হান সোবাহান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. ফরিদ, বিএনপি নেতা আল-আমিন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম হীরণ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি মো. শামসু মিয়া গুরুতর আহত হন', যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গেট থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ ৫ জনকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে, গত ১৮ আগস্ট বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিল থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী থানার ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড (পূর্ব) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন ভূঁইয়া তুহিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গতকাল নেত্রকোণা জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত এবং ২০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ৮টি মামলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে।'
তিনি বলেন, 'অবৈধ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একদিকে দেশের নিরীহ গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা গুলি করে হত্যা, গুম, খুনসহ সকল প্রকার নির্যাতন চালাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় সরকার বিরোধী মতের আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সরকারকে এ সকল অপকৌশল বন্ধ করে জনগণের মনোভাব অনুধাবন করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনতার উত্তাল তরঙ্গের ন্যায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করে সকল নির্যাতনের জবাব দিয়ে দেশের মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।'
Comments