বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে থাকার আহ্বান বিএনপির

গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার বিকেলে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এক সেমিনারে তিনি এই আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই সংকট শুধু বিএনপির বিষয় নয়, অথবা গণতন্ত্র মঞ্চ বা গণঅধিকার পরিষদের বিষয় নয়। এটা সমগ্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর চেয়ে বড় সংকট আগে কখনো আসেনি। আমি কথা বলতে পারব না, আমি বিচার পাব না, আমি সিকিউরিটি পাব না, আমি স্বাস্থ্যসেবা পাব না, আমি শিক্ষা পাব না… এটা হতে পারে না।'

'আজকে এই সেমিনারে যে আবেদন আমি জানাব, আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে, ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির কাছে, একইসঙ্গে জনগণের কাছে, আসুন আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে তার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে পাশে দাঁড়াই, সেই গণতন্ত্র যেটা জনগণকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে', বলেন তিনি।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নিউইয়র্ক টাইমস পরিষ্কার করে বলেছে যে, ধীরে ধীরে গোপনে নীরবে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মিলিয়নস অব পিপল। এটাই সত্য।'

'এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। আমি আবারও সকলকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ভয়াবহ দানব আমাদের বুকে ওপর বসে আছে তার থেকে আমরা নিজেকে মুক্ত করি, বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করি, মুক্ত একটা সমাজ গড়ে তুলি, মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি', বলেন তিনি।

গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে 'রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল' শীর্ষক এই সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিরোধীদলের ৪ মিলিয়ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, মিথ্যা মামলা হচ্ছে। এরকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে আদালত বলতে কিছু নেই, প্রশাসন বলতে কিছু নেই। যে প্রশাসন আছে তা শুধু তাদের জন্য।'

তিনি বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে আমাকে এক সাংবাদিক খবর দিয়ে গেলেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য যে বিবৃতি দিয়েছেন প্রায় ১৬০ জন আন্তর্জাতিক বিশ্বনেতা, তাদের এই বিবৃতির বিপক্ষে দেশের ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। ওই সাংবাদিক বলেছেন এটা ফেইক, এটাতে অধিকাংশই সই করেননি। এখন তারা কথা বলতে পারছেন না এজন্য যে, কথা বললে আবার তারা নির্যাতনে পড়বেন। এই যে ফিয়ার ভয়… সরকার সমস্ত জাতিটাকে একটা ভয়ের আস্তরের মধ্যে রেখেছে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কেন আসলাম প্রশ্ন করতে পারেন। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ৬ বছর হয়ে গেছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবরের কাগজে দেখছেন যে, ভেতরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য শুধু নয়, আন্তর্জাতিক কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় যে, রোহিঙ্গা এলাকায় উগ্রবাদ তৈরি হচ্ছে কি না।'

'এই বিষয়গুলো আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সরকারের জনগণের সমর্থন নেই, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এরা অনির্বাচিত সরকার। তার সে শক্তি নাই, যে শক্তি নিয়ে সে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে দাঁড়াতে পারে, কনভিন্স করতে পারে যে আমরা এই ইস্যুর সমাধান করতে চাই, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে এবং তাদের অধিকার, তাদের সম্মান দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেবে', বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'জনগণের সমর্থন নিয়ে যদি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা চাই এই সরকার যারা জনগণের অধিকার হরণ করে নিয়েছে, তাদের সরিয়ে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।'   

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান ও ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির ড. জাহেদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জাগপার তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও, সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, ইরান, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি ও ইউএসএইডসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

Comments

The Daily Star  | English

ICT case: Hasina charged with crimes against humanity

ICT prosecution pressed formal charges against Sheikh Hasina in a case filed over crimes against humanity committed during July mass uprising

2h ago